প্রতি বছর কয়েক মিলিয়ন টন প্লাস্টিক গিয়ে জমা হচ্ছে সমুদ্রে। কিছু অংশ ডুবে যাচ্ছে সমুদ্রের গভীরে। কিছু অংশ ভেসে থাকছে। প্লাস্টিক যে বাস্তুতন্ত্রের সমূহ ক্ষতি করছে, সে-কথা তো সকলেই জানি। কিন্তু যদি বলি, এই প্লাস্টিকের উপর নির্ভর করেই গড়ে উঠেছে একটি বিকল্প বাস্তুতন্ত্র! অবাক লাগারই কথা। তবু সেই বাস্তুতন্ত্র নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার শেষ নেই। তার একটি নামও ঠিক করা হয়েছে ইতিমধ্যে। প্লাস্টিস্ফফিয়ার।
ছোটো থেকেই তো ৩ ধরনের বাস্তুতন্ত্র সম্বন্ধে পরিচিত সবাই। হাইড্রোস্ফিয়ার অর্থাৎ বারিমণ্ডল, লিথোস্ফিয়ার অর্থাৎ মৃত্তিকামণ্ডল এবং অ্যাটমোস্ফিয়ার অর্থাৎ বায়ুমণ্ডল। কিন্তু এর পরেও থেকে যায় আরও একটি অংশ। আর সেটাই হল প্লাস্টিস্ফিয়ার। যেখানে জীবেদের বেঁচে থাকার মূল রসদ আসে প্লাস্টিক থেকেই। আজকাল তো প্লাস্টিকভূক ব্যাকটেরিয়ার কথা সকলেই জানেন। প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় এই ধরণের ব্যাকটেরিয়া ব্যবহারের কথাও উঠছে। কিন্তু এই ব্যকটেরিয়া কি বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারেই তৈরি করেছেন? এমনটা ভাবলে কিন্তু ভুল হবে। ২০১৩ সালে প্রথম প্লাস্টিকভূক ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পাওয়া যায় প্রশান্ত মহাসাগরের জলেই। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারে তাদের শনাক্ত করেছে মাত্র। সেই বছরই প্লাস্টিকের উপর বাসা বাঁধা অণুজীবদের নিয়ে গবেষণা শুরু করেন নেদারল্যান্ডসের গবেষক লিন্ডা আমারাল্ড-জেটলার। আর সেই গবেষণার সূত্র ধরেই উঠে আসতে থাকে অবাক করা কিছু তথ্য।
লিন্ডার গবেষণা থেকে দেখা গেল, বিজ্ঞানীরা প্লাস্টিকের উপর নির্ভরশীল জীবগোষ্ঠীর একটা অতি ক্ষুদ্র অংশের সন্ধান পেয়েছেন মাত্র। আর তা কেবল অণুজীবদের। কিন্তু আরও নানা প্রজাতির জীব প্লাস্টিকের উপর নির্ভর করে বেঁচে রয়েছে। মূলত প্রাণীরা। এর মধ্যে নানা প্রজাতির কাঁকড়া, জেলিফিশও রয়েছে। এবং প্রত্যেকের মধ্যে একটা মিলিত বেঁচে থাকার মাধ্যমও গড়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীদের অনেকেই কিন্তু এখনও এই বাস্তুতন্ত্রকে কোনো পৃথক শ্রেণিতে ফেলতে রাজি নন। অনেকের মতেই, এই বাস্ততন্ত্রের মূল উপাদানই যেখানে মানুষের তৈরি, সেখানে তাকে প্রাকৃতিক বলা চলে না কোনোভাবেই। অন্যদিকে আরেক দলের দাবি, বাস্তুতন্ত্রের সংজ্ঞা তো একাধিক প্রজাতির পারস্পরিক সমন্বয়ের ভিত্তিতে বেঁচে থাকা। সেখানে এই বাস্তুতন্ত্র তো সেই দাবি পূরণ করছে।
কিন্তু এরপরেও বিতর্ক থামে না। সারা পৃথিবীতে খুব কম অংশেই গড়ে উঠেছে এমন বাস্তুতন্ত্র। মূলত প্রশান্ত মহাসাগরের উপর গ্রেট গার্বেজ জোনের বাইরে এখনও অবধি এমন স্পষ্ট কোনো প্লাস্টিস্ফিয়ারের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাছাড়া প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ হলেই তো এই বাস্তুতন্ত্রও হারিয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে সমস্ত প্রজাতিও। তাহলে কি বদলে যাওয়া এই পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখতে প্লাস্টিকেরও প্রয়োজন আছে? বিজ্ঞানীদের অবশ্য দাবি, পরিবেশে এই বাস্তুতন্ত্রের প্রভাব নিশ্চই আছে। প্লাস্টিকেরও যেমন আছে, প্লাস্টিস্ফিয়ারেরও আছে। কিন্তু বাকি তিন বাস্তুতন্ত্রের কোনোটাই এর উপর নির্ভরশীল নয়। অতএব এই নতুন গড়ে ওঠা বাস্তুতন্ত্রকে প্রকৃতির বিরোধী বললেও ভুল বলা হবে না। অবশ্য প্লাস্টিক ছাড়া তার প্রতিটি উপাদানই প্রাকৃতিক।
আরও পড়ুন
অস্তিত্ব হারাচ্ছে প্রবাল, সংকটে গ্রেট বেরিয়ার রিফের বাস্তুতন্ত্র
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কমছে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা, সংকটে বাস্তুতন্ত্র