একুশ শতকে দাঁড়িয়ে আজও যৌনতা ছুৎমার্গ হয়েই রয়েছে গেছে বৃহত্তর সমাজে। লিঙ্গ পরিচয় বলতে শুধুমাত্র নারী এবং পুরুষকেই বোঝেন সমাজের একটা বড়ো অংশ। আর সেখান থেকেই জন্ম নেয় বৈষম্য। দেওয়াল উঠে যায় এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের চারপাশে। এবার এই বৈষম্যের বেড়াজাল ভাঙতেই অভিনব পদক্ষেপ নিল স্কটল্যান্ড (Scotland) সরকার। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে স্কুলপাঠ্যে বাধ্যতামূলকভাবে আন্তর্ভুক্ত করা হল এলজিবিটিকিউ শিক্ষা (LGBTQ Education) এবং ইতিহাস।
তবে স্কটল্যান্ড প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত একদিনের নয়। ২০১৯ সাল থেকেই এলজিবিটিকিউ ইতিহাস পাঠ্যের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করেছিল ইউরোপের দেশটি। সম্প্রতি সেই পরিকল্পনাকেই বাস্তবের রূপ দিল স্কটল্যান্ড সরকার। ছাত্রদের পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষাকর্মীরাও যাতে এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল হন, সে জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে স্কটিস প্রশাসন। বিগত ২০ সেপ্টেম্বর থেকেই শুরু হয়েছে স্কুলের সমস্ত কর্মীদের এলজিবিটিকিউ শিক্ষাদানের ট্রেনিং। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেই দেওয়া হয়েছে বিশেষ টুলকিট। পাশাপাশি মৌলিক সচেতনতা গড়ে তুলতে বাধ্যতামূলকভাবে ই-লার্নিং কোর্সের বন্দোবস্ত করেছে স্কটল্যান্ড শিক্ষা পর্ষদ।
এলজিবিটিকিউ ইতিহাসের পাশাপাশি লিঙ্গ বৈষম্য মুছে ফেলতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে স্কটল্যান্ড। গণিত, সাহিত্য কিংবা অন্যান্য বিষয়গুলির পাঠ্যেও প্রান্তিক লিঙ্গ যৌনতার মানুষদের প্রসঙ্গ উল্লেখিত হতে চলেছে আগামীদিনে। দৈনন্দিন জীবনে শিক্ষার্থীদের এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সম্পর্কে অভ্যস্ত করে তুলতেই এই উদ্যোগ স্কটল্যান্ডের। গত জুন মাসেই একটি বিশেষ সমীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেছিল ইউনাইটেড অ্যাডভোকেসি গ্রুপ। সেই রিপোর্টে উঠে আসে যুক্তরাজ্যে এলজিবিটিকিউ শিক্ষার্থীরা নারী কিংবা পুরুষের তুলনায় দ্বিগুণ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সচেতনতা গড়ে উঠলে সেই হারও কমে আসবে বলেই আশাবাদী স্কটিশ শিক্ষা পর্ষদ।
“ভারতে দীর্ঘ গণআন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ৩৭৭ ধারা অবলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু তারপরেও লিঙ্গ বলতে আমরা শারীরিক লিঙ্গচিহ্নকে বোঝাই, জেন্ডারকে বোঝাই না। অথচ এই বাইনারির বাইরে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ছোটো থেকে শিশুদের এটার না শেখালে, এলজিবিটি কমিউনিটির মানুষদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করা যাবে না। এবং তাঁদের পরিসংখ্যানের বিষয়েও আমাদের স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। কিছুদিন আগেই ওয়্যার পত্রিকার একটি সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় পুরুষ ও মহিলাদের পাশের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ঠিক বিপরীত ঘটনা ঘটেছে এলজিবিটি কমিউনিটির ক্ষেত্রে। সেখান থেকে স্পষ্ট যে অত্যাচার, নির্যাতনের কারণে এলজিবিটি ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে হারিয়ে যান”, কলকাতার এলজিবিটিকিউ অধিকারকর্মী এবং ‘প্রান্তকথা’-র কর্ণধার বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন
আফগানিস্তানের এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্য লড়ছেন নেমাত সাদাত, সাক্ষী কলকাতাও
জানা গেল, কিছুদিন আগেই পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা আয়োগ থেকে দু’দিনের একটি অনলাইন কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই কর্মশালাতেও উঠে এসেছিল এলজিবিটিকিউ শিক্ষার্থীদের কথা। বাপ্পাদিত্য জানালেন, “ভারতে এটি প্রথম কোনো শিশু সুরক্ষা আয়োগ যারা প্রথম এই বিষয়ে কথা বলতে চাইল। এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমস্ত দপ্তর সেখানে উপস্থিত ছিল।” এই ধরনের গঠনমূলক আলোচনাগুলির মধ্যে দিয়েই আগামীদিনে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায় সম্পর্কে ধারণা বদলাবে সমাজের, সে ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী তিনি। ফলত, একথা বলাই যায় পিছিয়ে নেই ভারত। স্কটল্যান্ডের দেখানো পথেই যেন ধীরে ধীরে এগোচ্ছে আমাদের দেশ। সুদিন আসতে বেশি বাকি নেই আর…
আরও পড়ুন
জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষরাও, ঘোষণা অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
শরীর অর্ধেক পুঁতে, ইট ছুঁড়ে হত্যা; ভয়াল স্মৃতি এলজিবিটি সম্প্রদায়ের আফগানদের