মাস তিনেক আগেই প্রয়াত হয়েছিলেন স্কুবি-ডুর নির্মাতা জো রুবি। এবার চলে গেলেন সহ-নির্মাতা কেন স্পিয়ার্সও। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। বেশ কিছুদিন ধরেই ভুগছিলেন পার্কিনসন-সহ স্মৃতিভ্রংশ ও জটিল স্নায়ুরোগে। চিকিৎসা চলার পরেও ক্রমাগত অবনতি হচ্ছিল শারীরিক অবস্থার। অবশেষে থেমে গেল লড়াই। স্পিয়ার্স-পুত্র কেভিন নিশ্চিত করেন, গত সপ্তাহে লস অ্যাঞ্জেলিসে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
একুশ শতকেও রমরমিয়ে টেলিভিশন ও সেলুলয়েড পর্দা মাতানো স্কুবি-ডু’র জন্ম হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। সেই অ্যানিমেশন শোয়ের নাম ছিল ‘স্কুবি ডু, হু আয়ার ইউ!’। জো রুবির পাশাপাশি কেন স্পিয়ার্সও হাত লাগিয়েছিলেন সৃজনশীল নির্মাণে। তবে চলেছিল মাত্র দু’টি সিরিজ। ১৯৭০ সালেই বন্ধ হয় স্কুবি-ডু’র প্রোডাকশন। তবে প্রকাশিত অ্যানিমেশনের বাইরেও যা টেমপ্লেট তৈরি করেছিলেন এই দুই কিংবদন্তি, সেগুলিই পরবর্তীও ৫০ বছর ধরে জন্ম দিয়েছে বহু বহু স্কুবি-ডু অ্যানিমেশনের। নতুন নির্মাতারাও এগিয়ে এসেছিলেন এই কাহিনির রেখাঙ্কনে।
কেন স্পিয়ার্সের জন্ম ১৯৩৮-এর ১২ মার্চ। লস অ্যাঞ্জেলিস শহরেই বেড়ে ওঠা তাঁর। অ্যানিমেশন প্রোডিউসার উইলিয়াম হান্না’র ছেলের বন্ধু হওয়ার দৌলতেই হান্না-বারবারা প্রোডাকশন হাউসে কাজ পেতে অসুবিধে হয়নি তাঁর। তবে শুরুতে সাউন্ড এডিটর হিসাবেই কাজ করতেন তিনি। তারপর সেই অফিসেই আলাপ জমে আরেক তরুণ কর্মী রুবির সঙ্গে। বছর পাঁচেকের বড় রুবির সঙ্গে বন্ধুত্ব এতটাই ঘনিষ্ট হয়ে উঠেছিল, যে ধীরে ধীরে স্টাফ-লেখকও হয়ে ওঠেন কেন। স্কুবি-ডু’র চিন্তা মাথায় আসতে, তাঁকে সেই পরিকল্পনার অংশ করে নিয়েছিলেন রুবি। তারপর যে আলৌকিকতার সৃষ্টি হয়েছে, তা এতদিন পরে নতুন করে বলে দেওয়ার কিছুই নেই।
অ্যানিমেশন উদ্ভাবনী ক্ষমতার পাশাপাশি কৌতুক এবং গল্প বলার অভিনবত্ব আলাদা করে দিয়েছিল কেন স্পিয়ার্সকে। রুবির সঙ্গেই জুটি বেঁধে কাজ করেছেন ‘ডাইনোমাট, ডগ ওয়ান্ডার’, ‘জ্যাবার-জ’, ‘দ্য হাউন্ডক্যাটস’, ‘দ্য বার্কলিস’ প্রভৃতি অ্যানিমেশনে। ১৯৭৭ সালে দুই বন্ধু এবিসি নেটওয়ার্কের আওতায় যৌথভাবে শুরু করেছিলেন নিজেদের স্টুডিও ‘রুবি-স্পিয়ার্স প্রোডাকশন’। ‘অ্যালভিন এন্ড দ্য চিপমাঙ্কস’, ‘সুপারম্যান’, ‘ ফ্যাংফেস’, ‘মিস্টার-টি’ প্রভৃতি বিখ্যাত সিরিজ এসেছিল সেই হাউসের দৌলতেই।
বছর পাঁচেকের ছোট হয়েও যে বন্ধুর সঙ্গে এতটুকু ফাঁক পড়েনি ঘনিষ্ঠতায়, তাঁর মৃত্যুই যেন মেনে নিতে পারলেন না কেন স্পিয়ার্স। রুবির মৃত্যুর পর নিজেও যেন যাত্রা লাগালেন তাঁর কাছে পৌঁছানোর জন্য। কেনের মৃত্যুর পরই স্কুবি-ডু’র ইনস্টাগ্রাম পেজের স্কুবি-ডু দলের ছবির ক্যাপশন বদলে করা হয় ‘স্কুবি-ডু ১৯৩৮-২০২০’। কেন স্পিয়ার্সকে এভাবেই শেষ শ্রদ্ধা জানাল কিংবদন্তি অ্যানিমেশন। কেনের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ চলচ্চিত্র-জগতও।
তবে অ্যানিমেশনের জগতে রুবি ও কেন স্পিয়ার্স বেঁচে থাকবেন আজীবন। বয়েস বাড়বে না স্কুবি-ডু’র। কেননা, হার মেনে নেওয়া রক্তে নেই তাদের। যে কোনো ক্রাইম সিকোয়েন্সেরই শেষ দেখে ছাড়ত তাদের দল। দল বলতে ড্যাফনি, ফ্রেড, শ্যাগি রজারস, ভেলমা— এই চার কিশোর-কিশোরী আর তাদের আলৌকিক গ্রেট ডেন স্কুবার্ট ওরফে স্কুবি। তাবড় রহস্যরাও মাথা নত করত তাদের সামনে। পাঁচ দশক বয়স হওয়ার পরেও আজও অনেকের স্মৃতিতেই জাঁকিয়ে বসে রয়েছে এই রহস্য কাহিনি। প্রজন্মের পর প্রজন্মের কিশোর বয়সের সঙ্গী হয়ে এসেছে এই পাঁচ ‘মহারথী’। শুধু সিনেমার পরিচালক বদলে নতুন নতুন রূপে পর্দায় ফিরবে সে। আর মনে করিয়ে দেবে তাঁর আদিমতম স্রষ্টাদের। যাঁদের ছাড়া অসম্ভব ছিল এমন ভূতুড়ে রহস্য-কাহিনির গল্পবুনন...
আরও পড়ুন
৫০ বছরের ইতিহাসের সমাপ্তি, প্রয়াত হলেন ‘স্কুবি ডু’-র সহনির্মাতা জো রুবি
Powered by Froala Editor