দেহের পশ্চাৎভাগটা অনেকটা ডলফিনের মতো। আর মুখের আকৃতিতে অনেকটা সিন্ধুঘটক। সমুদ্রের তলদেশে জন্মানো ঘাসের চাদরেই ঘুরে বেড়ায় এই আশ্চর্য প্রাণীটি। ডুগং (Dugong) নামের এই সামুদ্রিক জীব চলতি কথায় পরিচিত ‘সি-কাউ’ নামে। মজার বিষয় হল, মাছ কিংবা ডলফিন নয়, বরং মারমেইড বা মৎস্যকন্যার কিংবদন্তির উদ্রেক করেছিল এই ডুগংরাই। এবার বিলুপ্তির একদম কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে এই প্রাণীটি। এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষকরা।
আইইউসিএন-এর আন্তর্জাতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বের একাধিক অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ডুগং। যার মধ্যে অন্যতম চিন। মাস কয়েক আগেই জানানো হয়েছিল দক্ষিণ চিন সাগর ও চিনের উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে কার্যত বিলুপ্ত হয়েছে এই প্রাণীটি। যার অর্থ, এখনও কিছু কিছু সংখ্যক ডুগং বেঁচে থাকলেও, তাদের বংশবিস্তারের সম্ভাবনা নেই কোনো। গবেষকদের অনুমান, চিনের পর এই একই ঘটনা ঘটতে চলেছে মোজাম্বিক এবং অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের নিউ ক্যালিডোনিয়ায়।
সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীটি সমুদ্রের তলদেশে ঘুরে বেড়ানোর কারণেই অধিকাংশ সময়ে আটকা পড়ে মাছ ধরার জালে। তাছাড়া অগভীর সমুদ্রে থাকার কারণে জাহাজ কিংবা স্টিমারের ধাক্কাতেও মৃত্যু হয় বহু ডুগং-এর। দক্ষিণ চিন সাগর থেকে ডুগং-অবলুপ্তির কারণও সেটাই। বর্তমানে বিশ্বের ৪০টি দেশে দেখা মেলে ডুগং-এর। যার মধ্যে সমুদ্রগাভীর সবচেয়ে বড়ো বাসস্থান হল অস্ট্রেলিয়া। তবে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে ক্রমশ মানুষের কার্যকলাপ বৃদ্ধি বিপন্নতার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে তাদের। অন্যদিকে মোজাম্বিকে কেবলমাত্র জীবিত রয়েছে ২৫০টি সমুদ্রগাভী।
এই গবেষণায় আলাদা করে ভারতের কথা উল্লেখ করা না হলেও, কিছুদিন আগেই ডুগংদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মাদ্রাজ আইআইটির এক গবেষক। ভারতে ডুগংদের সবচেয়ে বড়ো আবাসস্থল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। এমনকি কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলের রাজ্য প্রাণী ডুগং। তবে গ্রেট নিকোবর দ্বীপে আগামীদিনে গড়ে উঠতে চলা কোটি ডলারের প্রোজেক্ট সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীটির টিকে থাকা কঠিন করে তুলবে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
২০১৫ সালেই ডুগং-কে বিপন্নপ্রায় প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন ফর নেচার। তবে তারপর পেরিয়ে গেছে ৭টি বছর। আয়োজিত হয়েছে জাতিসঙ্ঘের একাধিক জীববৈচিত্র সংক্রান্ত সম্মেলনও। তবে এতকিছুর পরেও ভাগ্য বদলায়নি ডুগংদের। আন্তর্জাতিক গবেষকদের মতে, ডুগংদের বাসস্থানগুলি চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে মানুষের কার্যকলাপ ও বাণিজ্যিক অনুমোদন বন্ধ করা না হলে কয়েক দশকের মধ্যেই পৃথিবী থেকে মুছে যেতে পারে এই প্রাণীটিও…
Powered by Froala Editor