গত মার্চ মাসে ভারতে আছড়ে পড়েছিল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা যেখানে মাত্র ১০ হাজারের মধ্যে ছিল, কয়েকদিনের মধ্যেই তা পৌঁছায় ৪ লক্ষে। শুধু দ্বিতীয় তরঙ্গেই ভারতে মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ মানুষের। কিন্তু সত্যিই কি আটকানো যেত না? হ্যাঁ, গবেষকরা সতর্ক করেছিলেন আগেই। এবার আরও একবার সতর্কতা জারি করলেন তাঁরা। জানালেন, দ্বিতীয় তরঙ্গের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই তৃতীয় তরঙ্গ আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ছে ক্রমশ। এবং সেই আঘাত আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে বলেই ধারণা গবেষকদের।
সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে মিলেছে ভাইরাসের এক নতুন স্ট্রেন। করোনাভাইরাসের ভারতীয় মিউট্যান্টই বেশ কিছু পরিবর্তন করে জন্ম দিয়েছে এই স্ট্রেনের। গবেষকরা জানাচ্ছেন সদ্য পাওয়া এই স্ট্রেন আরও বেশি সংক্রামক। গবেষকরা তো বটেই, পাশাপাশি গতকাল কেন্দ্রকে সতর্ক করেই চিঠি লিখলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। প্রস্তাব দিলেন, যেন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় সিঙ্গাপুরের বিমান অবতরণ। কারণ সামান্য ভুলই ডেকে আনতে পারে বড়ো বিপদ।
কিন্তু শুধুই কি সিঙ্গাপুরের স্ট্রেন? গবেষকরা বলছেন, ভারতে তৃতীয় তরঙ্গ অবশ্যম্ভাবী। সিঙ্গাপুর থেকে নতুন স্ট্রেনের সংক্রমণ না ছড়ালেও চরিত্র বদলে আরও ঘাতক হয়ে উঠছে ভারতীয় স্ট্রেন। ইতিমধ্যেই ভারতে হদিশ পাওয়া গিয়েছে একাধিক নতুন মিউটেশনের। যার মধ্যে সবথেকে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশে প্রাপ্ত ভাইরাস স্ট্রেন। কানপুর আইআইটির গবেষকদের পরিসংখ্যান মডেল অনুযায়ী সামনের অক্টোবর মাসেই ব্যাপক আকার নিতে পারে নতুন কোনো স্ট্রেনের সংক্রমণ। যা কার্যত তৃতীয় ঢেউ।
করোনাভাইরাসের প্রথম তরঙ্গের সময় লক্ষ্য করা গিয়েছিল ফুসফুসে সম্পূর্ণ সংক্রমণ ছড়াতে সময় লাগে আনুমানিক ১০ দিন। দ্বিতীয় তরঙ্গে সেই সময়সীমা কমে এসে দাঁড়ায় ৫-৭ দিনে। গবেষকদের আশঙ্কা তৃতীয় তরঙ্গে মাত্র ২-৩ দিনের মধ্যেই ভয়ঙ্করভাবে আক্রান্ত হতে পারে ফুসফুস। ইতিমধ্যেই এমন ঘটনা দেখতে পাওয়া গেছে অন্ধ্রপ্রদেশে। ফলে তৈরি হতে পারে আরও বড়ো স্বাস্থ্য সংকট। তাই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আগে থেকেই মজবুত করার আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা। না হলে, বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে ভারতকে।
আরও পড়ুন
গঙ্গাতীরে গণকবর, দেশের করোনা-পরিস্থিতির প্রতিফলন উত্তরপ্রদেশে?
ঠিক একইভাবে ভাইরাসের চরিত্র বদল হওয়ার জন্য তৃতীয় ঢেউ-এ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সব থেকে বেশি শিশুদের মধ্যে। তবে তারা আর শুধু সুপার স্প্রেডার নয়। বরং, তাদের দেহেও রীতিমতো থাবা বসাতে পারে ভাইরাস। কাজেই শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে পারলে খানিকটা হলেও এড়িয়ে যাওয়া যাবে তৃতীয় তরঙ্গের ভয়াবহতা।
আরও পড়ুন
মজবুত করতে হবে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, করোনা-মোকাবিলায় নিদান চিকিৎসকদের
গতকাল কেন্দ্রকে চিঠির মাধ্যমে এই কথাই যেন স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। শিশুদেরও যাতে দ্রুত টিকাকরণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়, তিনি সেই আবেদনই রেখেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এখন দেখার কতটা তৎপর হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র সরকার। পাশাপাশি সিঙ্গাপুরের স্ট্রেনকে আটকাতে সত্যিই কি বন্ধ করা হবে বিমান পরিষেবা? নাকি আবারও বাড়তি বিপদ ডেকে আনবে সামান্য অবহেলা? আশঙ্কার সঙ্গেই সরকারের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন বিশেষজ্ঞ দল…
আরও পড়ুন
লোহার ফুসফুস নিয়েই ৬৮ বছর, করোনায় সন্ত্রস্ত আলেকজান্ডার
Powered by Froala Editor