মহাবিশ্বের অন্যতম বিস্ময় ব্ল্যাকহোল (Black Hole)। আজ থেকে কয়েক দশক আগেও ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব ছিল তত্ত্বমাত্র। তবে বিজ্ঞানের অগ্রগতি ক্রমশ বাস্তবের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছে তত্ত্বকে। ক্যামেরাতেও ধরা পড়েছে তার আগ্রাসী চরিত্রের ছবি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের জানার পরিধি সামান্যই।
বেশ কিছুদিন আগের ঘটনা। মার্কিন গবেষকদের টেলিস্কোপে ধরা পড়েছিল এক বিরল মহাজাগতিক ঘটনা। পৃথিবী থেকে প্রায় ২০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত একটি ব্ল্যাকহোল গিলে খাচ্ছে সূর্যের থেকেও বড়ো একটি নক্ষত্রকে। এক কথায় যা অবিশ্বাস্য ঘটনা। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, নক্ষত্রটিকে একবারে গ্রাস করেনি সংশ্লিষ্ট ব্ল্যাকহোলটি। বরং, ব্ল্যাকহোলের তীব্র আকর্ষণে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে নক্ষত্রটি। ধীরে ধীরে তা শোষিত হয় ব্ল্যাকহোলে। নির্গত হয় উচ্চ কম্পাঙ্কের এক্স-রে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই ঘটনাটিকে বলা হয় টাইডাল ডিসরাপশন।
‘জে-২১৫০’-খ্যাত এই মহাজাগতিক ঘটনা থেকেই এবার নতুন তথ্য খুঁজে পেলেন গবেষকরা। মার্কিন, ইজরায়েল নেদারল্যান্ডসের একদল জোর্তিবিজ্ঞানী প্রথমবারের জন্য ব্ল্যাকহোল থেকে নির্গত এক্স-রে বিশ্লেষণে নির্ণয় করলেন সংশ্লিষ্ট নক্ষত্র এবং কৃষ্ণগহ্বরের ভর। সন্ধান দিলেন ব্ল্যাকহোলের ঘূর্ণনগতিরও। পরবর্তীতে যা ব্ল্যাকহোলকে প্রদক্ষিণরত ডার্ক ম্যাটারের চরিত্র বুঝতে আরও সাহায্য করবে বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা। উল্লেখ্য, প্রচলিত কোনো যন্ত্র দিয়েই ডার্ক এনার্জি বা ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব আমাদের নজরে আসে না।
তবে এখানেই শেষ নয়। তাঁদের এই গবেষণায় উঠে এল আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তা হল, ব্ল্যাকহোলের আয়তন বৃদ্ধি। নক্ষত্রদের গ্রাস করে কীভাবে ছোট্ট একটি ব্ল্যাকহোল সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়, তাও তাত্ত্বিকভাবে বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। সম্প্রতি এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল’ জার্নালে।
আরও পড়ুন
ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! প্রমাণ মিলল আইনস্টাইনের তত্ত্বের
গবেষকদের অনুমান, সংশ্লিষ্ট ব্ল্যাকহোলটির ভর সূর্যের প্রায় ১০ হাজার গুণ। ফলত, তাকে ইন্টারমিডিয়েট বা মধ্যবর্তী ভরের বিভাগেই রেখেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে ভর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্ল্যাকহোলের চরিত্র, ঘূর্ণন এবং বিকিরণও বদলে যায়— সেই কথাও জানিয়েছেন তাঁরা। কাজেই, এক রাশ রহস্যের সামান্যটুকুই উন্মোচিত হল আমাদের সামনে। এখনও অধরা মহাজাগতিক রহস্যের একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চল…
আরও পড়ুন
ব্ল্যাকহোলের রহস্যে উঁকি দিয়ে পদার্থবিদ্যায় নোবেল তিন বিজ্ঞানীর
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ধরা দিল ব্রহ্মাণ্ডের সবথেকে পুরনো ব্ল্যাকহোল, আশ্চর্য চরিত্রে অবাক বিজ্ঞানীরাও