বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলতে থাকা বৈজ্ঞানিক গবেষণা। কতদিন হতে পারে? ১০ বছর বা ২০ বছর! অথবা কোনো বৈজ্ঞানিক তাঁর সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারেন একটি পরীক্ষার পিছনেই। কিন্তু নয় নয় করে ১৪২ বছর ধরে চলছে একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা? এমনটা ভাবতে আশ্চর্য লাগে বৈকি! তবে আশ্চর্য হলেও সত্যি। আমেরিকার মিশিগান স্টেটেই চলছে এই গবেষণা। ১৮৭৯ সালে শুরু হওয়া পরীক্ষার জন্য আজও মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা আছে অসংখ্য বীজ। সম্প্রতি সেই বীজ ব্যাঙ্ক থেকেই একটি শিশি তুলে এনে নতুন করে পরীক্ষা শুরু করেছেন মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের গবেষকরা।
বিল’স সীড টেস্ট নামে বিখ্যাত এই পরীক্ষার কথা অবশ্য অনেকেই জানেন। জীববিদ্যার ইতিহাসে অন্যতম অদ্ভুত একটি পরীক্ষা। ১৮৭৯ সালে ডঃ উইলিয়াম জেমস বিল হঠাৎ ভাবলেন, পরীক্ষা করে দেখতে হবে এক একটি বীজ কতদিন মাটির নিচে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। তার জন্য লবঙ্গ, সরষে সহ নানা প্রজাতির বীজ সংগ্রহ করে মোট ২০টি শিশিতে জমিয়ে রেখে দিলেন মাটির নিচে। অবশ্য বিরাট বাগানের ঠিক কোথায় বীজ লুকানো আছে, তা জানার জন্য একটি মানচিত্রও বানালেন। প্রথমে ঠিক করেছিলেন ৫ বছর পরপর একটি করে শিশি তুলে এনে পরীক্ষা করা হবে। দেখা হবে কোন প্রজাতির বীজ থেকে কত শতাংশ ক্ষেত্রে অঙ্কুরোদগম হচ্ছে, আর কত বছরের মাথায় সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হচ্ছে। অবশ্য পরে এই ৫ বছরের পার্থক্য বাড়িয়ে ১০ বছর এবং আরও পরে ২০ বছর করা হয়। কারণ গবেষকরা বুঝতে পারেন, বীজের অঙ্কুরোদগমের ক্ষমতা সহজে নষ্ট হওয়ার নয়।
এর মধ্যেই দেখতে দেখতে কেটে গেল ১৪২ বছর। আরও ৪টি শিশি রাখা আছে মাটির নিচে। ফলে এখনও ৮০ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া যাবে। সম্প্রতি মিশিগান স্টেট ইউনভার্সিটির গবেষকরা গভীর রাতে শুরু করলেন পরীক্ষার কাজ। অবশ্য এবারে শিশি খুঁজে পেতে বেশ সমস্যাই হয়েছিল। সারা রাত খোঁজার পর ভোরের দিকে সন্ধান পাওয়া গেল। উদ্ভিদবিদ্যার গবেষণাও যে এমন রোমাঞ্চকর হতে পারে, তা আন্দাজ করা সত্যিই কঠিন। তবে শুধুই রোমাঞ্চ তৈরির জন্য নয়, বরং বাকি বীজগুলি যাতে সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসতে না পারে, তাই রাতে শিশি খোঁজা হয়। যদিও কোন বীজ মাটির নিচে কতদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে, তা জানার জন্য এখন বিজ্ঞানীদের কাছে আরও উন্নত প্রযুক্তি আছে। এই দীর্ঘ পরীক্ষার প্রয়োজন নেই সেখানে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার উদ্দেশ্য অনেকটাই বদলেছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এখন তাঁরা খুঁজতে চাইছেন বীজের অঙ্কুরোদগমের জন্য কোন কারণ কতটা দায়ী। সূর্যালোক ছাড়া আর কোন কোন উপাদান থেকে বীজ জানতে পারে যে এবার একটি নতুন গাছ জন্মাতে পারে? আর অঙ্কুরোদগমের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা মানেই কি বীজের মৃত্যু? নাকি কোনোভাবে আবার সেই বীজের প্রাণ ফিরিয়ে আনা যায়? এমনই নানা প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানীরা আজও খুঁজে চলেছেন। আপাতভাবে মামুলি মনে হলেও প্রতিটা উত্তরই অজানা। ১৪২ বছর ধরেও সেসবের হদিশ মেলেনি।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
গাছেদের শরীরেও আছে চৌম্বকক্ষেত্র, সন্ধান দিলেন জার্মানির বিজ্ঞানীরা