জুরাসিক পার্ক সিনেমাটার কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? অ্যাম্বারে আটকে যাওয়া একটি মশার পেট থেকে ডাইনোসরের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে গবেষকরা ফিরিয়ে এনেছিলেন প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের। কল্পবিজ্ঞানের জগতে জুরাসিক পার্ক অন্যতম একটি মাইলফলক। কিন্তু কথায় আছে, যেখানে মানুষের কল্পনা শেষ সেখান থেকেই শুরু হয় বিজ্ঞানের। হ্যাঁ, এবার তেমনটাই হতে চলেছে। প্রাগৈতিহাসিক ম্যামথদের (Mammoth) পুনরুজ্জীবিত (Resurrect) করতে তোড়জোড় শুরু করে দিলেন গবেষকরা।
শুনতে অবাস্তব মনে হলেও সত্যি। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজননবিদ্যার গবেষক জর্জ চার্চের সঙ্গে জুটি বেঁধে এমনই এক অদ্ভুত প্রকল্পে নামলেন উদ্যোগপতি বেন লাম। ‘কলোসাস’ (Colossus) নামে যৌথভাবে একটি প্রযুক্তি সংস্থাও গড়ে ফেলেছেন এই দুই ব্যক্তিত্ব। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, ৪ হাজার বছর আগে অবলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই দৈত্যাকার প্রাণীটিকে কীভাবে ফিরিয়ে আনবেন গবেষকরা?
হ্যাঁ, এবারেও ভরসা সেই জিনই। সাম্প্রতিক সময়ে সাইবেরিয়া এবং আর্কটিক সার্কেলের অন্যান্য অঞ্চলগুলিতে একাধিক ম্যামথের দেহ উদ্ধার করেছেন বিজ্ঞানীরা। যা এতদিন হিমায়িত অবস্থাতে সংরক্ষিত ছিল বরফের চাদরের নিচে। ফলে, এখনও অক্ষত রয়েছে সেইসব ম্যামথের দেহকোষ। সেখান থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করেই তৈরি করা হবে ম্যামথের জিনোম সিকোয়েন্স। তারপর তা স্বাভাবিক হাতির জিনের সঙ্গে মিশিয়ে জন্ম দেওয়া হবে হাতি-ম্যামথ সংকর প্রজাতির। তবে সংকর প্রজাতি হলেও, নতুন অপত্যের চেহারা এবং আয়তন প্রাগৈতিহাসিক পূর্বসূরিদের থেকে খুব একটা আলাদা হবে না।
এই প্রোজেক্ট সফল হলে, তা প্রাণী গবেষণার জগতে যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। পাশাপাশি চার্চ এবং লামের দাবি, একটা সময় এই ধরনের দৈত্যাকার জীবেরা পৃথিবীর উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করত। ফলত, আর্কটিক অঞ্চলে তাদের পুনরায় ফেরাতে পারলে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মোকাবিলা করা যাবে। তবে এই দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত মতও প্রকাশ করেছেন অনেক গবেষক।
আরও পড়ুন
ভারতের নিজস্ব ‘জুরাসিক পার্ক’, দাপিয়ে বেড়াত ১৩টি প্রজাতির ডাইনোসর!
ইতিমধ্যেই এই প্রোজেক্টের জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু করে দিয়েছে ‘কলোসাস’। সব মিলিয়ে বরাদ্দ হয়েছে দেড় কোটি মার্কিন ডলার। বড়ো অঙ্কের বেতন দিয়ে নিয়োগ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রথম সারির জিন বিশেষজ্ঞদেরও। কিন্তু এত কিছুর পরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, এমন একটা বৈজ্ঞানিক প্রকল্প কতটা নিরাপদ মানুষের জন্য? না, জুরাসিক পার্কের সেই গল্পের মতো ম্যামথের হামলার কথা হচ্ছে না। বরং গবেষকদের একাংশের আশঙ্কা অণুজীবদের নিয়ে। প্রাগৈতিকহাসিক এই জীবদের প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে অজানা কোনো প্যাথোজেনের। যা মানব সভ্যতার কাছে ত্রাস হয়ে দাঁড়াতে পারে করোনাভাইরাসের মতো। তবে এ বিষয়ে তর্ক গড়ানোর এখনও ঢের সময় বাকি। আগে দেখার, আদৌ হাইব্রিড ম্যামথ তৈরির চ্যালেঞ্জ ঠিকভাবে উৎরোতে পারে কিনা প্রোজেক্ট ‘কলোসাস’…
আরও পড়ুন
প্রাচীন জনবসতিতে আবিষ্কৃত ম্যামথের দাঁত, মানুষ কি পোষ মানিয়েছিল ম্যামথকেও?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বিস্তীর্ণ জায়গায় ছড়িয়ে ৬০টি ম্যামথের হাড়, রাশিয়ায় প্রাচীন মানুষের ‘কীর্তি’