ক্রমশ বেড়ে চলেছে বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং গ্রিন হাউস এফেক্টের মাত্রা। এবার পৃথিবীর উষ্ণতা কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রযুক্তির দ্বারস্থ হলেন বিজ্ঞানীরা। বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বৈজ্ঞানিক সংস্থা সরকারের কাছে আবেদন করে, এই নতুন প্রযুক্তিতে অর্থ বিনিয়োগের জন্য। যার পরিমাণ ১০ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু কৃত্রিম উপায়ে কীভাবে শীতল করা হবে পৃথিবীকে?
গবেষকরা জানাচ্ছেন, সূর্য থেকে আগত রশ্মিকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার আগেই মহাকাশে ফিরিয়ে দিলে সমাধান মিলতে পারে এই সমস্যার। এই প্রযুক্তিকে তাঁরা অভিহিত করেছেন ‘সোলার জিওইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এই পদ্ধতিতে কৃত্রিমভাবে এয়ারোসোল প্রতিস্থাপন করা হবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরের স্তরে। আর এই এয়ারোসোলের মাধ্যমেই প্রতিফলিত হবে সূর্যের তাপীয় রশ্মিগুলি। ফলে ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা।
তবে সোলার ইঞ্জিনিয়ারিং কোনো নতুন উদ্যোগ নয়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে আলোচনায় উঠে এসেছিল এই প্রযুক্তির কথা। এমনকি মার্কিন কংগ্রেসের দ্বিপক্ষীয় সমর্থনে এই প্রযুক্তির পরীক্ষার জন্য খরচ করা হয়েছিল ৪০ লক্ষ মার্কিন ডলার। তবে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেও থেকে যাচ্ছে বিতর্ক। আদৌ কি কার্যকরী হবে এই কৃত্রিম প্রযুক্তি? তা অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে না তো সভ্যতার কাছে?
গবেষকদের একাংশের অভিমত, কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প হতে পারে না। পাশাপাশি কৃত্রিমভাবে এই তাপমাত্রা হ্রাস ত্বরান্বিত করতে পারে আবহাওয়া পরিবর্তনকেও। তাতে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থনীতিতে পিছিয়ে থাকা দেশগুলি। কারণ, ব্যয়বহুল এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সামর্থ্য নেই অধিকাংশ রাষ্ট্রেরই। ফলত, সামগ্রিক বিশ্বের তাপমাত্রা কমলেও, আঞ্চলিক ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত থাকবে উষ্ণায়নের প্রভাব। অন্যদিকে কৃত্রিম এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে, সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখা যাবে গা-ছাড়া মনোভাব। কার্বন নির্গমন কমাতে ততটাও আগ্রহী হবে না শিল্পাঞ্চলগুলি। পরবর্তীতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ করে দিলে, আকস্মিকভাবেই বৃদ্ধি পাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা। যা ডেকে আনতে পারে ভয়ঙ্কর বিপদ।
আরও পড়ুন
দূষণমুক্ত বায়ুই বাড়িয়ে তুলেছে পৃথিবীর উষ্ণতা, চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল গবেষণায়
তবে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং ‘উন্নয়ন’-এর জোয়ারে আগামীতে কার্বন নির্গমনে কোনো বদল আসার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক বৈঠকগুলিতে পরিবেশরক্ষার পক্ষে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ইতিবাচক ফলাফল মেলেনি কোনোটারই। ফলে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে রাখতে কোনো না কোনো কৃত্রিম প্রযুক্তির শরণাপন্ন হতেই হবে আমাদের। এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ।
আরও পড়ুন
মানুষের তৈরি সূর্য! ২০ সেকেন্ড ধরে ১০০ মিলিয়ন কেলভিন উষ্ণতায় জ্বলল কৃত্রিম নক্ষত্র
তবে পুরোটাই এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে তত্ত্ব এবং প্রাথমিক স্তরের পরীক্ষার ওপর। এই প্রযুক্তি আশীর্বাদ না অভিশাপ— তা বিস্তারে পরীক্ষা করে দেখার অবকাশ রয়েছে। একাধিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিষয়টির পরীক্ষামূলক পর্যালোচনার অঙ্গীকার দিয়েছে নাসাও। এখন দেখার এই প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবীরা সবুজ সংকেত দেন কিনা। তার ওপরেই অনেকটা নির্ভর করে রয়েছে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর ললাটলিখন…
Powered by Froala Editor