বাংলা সাহিত্য হোক কিংবা লোককথা— বার বার ফিরে এসেছে আত্মার সঙ্গে কথোপকথন কিংবা ‘নিশির ডাক’-এর মতো ঘটনা। বাস্তবেও এমন অনেকেই বিশ্বাস করেন যে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ফিসফিস করতে কথা বলে যায় অশরীরীরা। শুধু ভারতই নয়, এমন ভৌতিক ঘটনায় বিশ্বাসী মানুষের দেখা মিলবে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তেই। এবার মৃতদের সঙ্গে এই কথোপকথন নিয়ে গবেষণায় নামলেন বিজ্ঞানীরা। খোঁজার চেষ্টা করলেন তাঁর কারণ।
ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী জড়িত ছিলেন এই গবেষণার সঙ্গে। সম্প্রতি এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘মেন্টাল হেলথ, রিলিজিয়ন অ্যান্ড কালচার’ জার্নালে। মৃতদের কণ্ঠস্বর শোনার রহস্যের খানিকটা সমাধান করতে সক্ষম হয়েছেন বলেই, দাবি জানান তাঁরা। গবেষকদের মতে মানসিক অবস্থা এবং অস্বাভাবিক শ্রবণ অভিজ্ঞতার কারণেই এই ধরণের বিশ্বাসের জন্ম নেয় মানুষের মধ্যে। পরবর্তীকালে তার সঙ্গে মিশে যায় আধ্যাত্মবাদ এবং ‘স্পিরিচুয়ালিজম’।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ধরণের অস্বাভাবাবিক শ্রবণের সঙ্গে হ্যালুসিনেশনের ঘটনাও লক্ষ করেছেন তাঁরা। অনেকাংশে স্কিৎজোফ্রেনিয়ার অনুরূপ চিকিৎসায় মিলেছে সুফলও। ফলে মৃতদের কথা শুনতে পাওয়াকে অবচেতন মনের কোনো রহস্য হিসাবেই বিবেচনা করছেন তাঁরা। কোনো দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকার কারণে ভয় কিংবা কোনো হিংসাত্মক বা প্যারানর্মাল সিনেমার দর্শক হওয়ার কারণে হঠাৎ কল্পনাপ্রবণ হয়ে গেলে এই ধরণের ঘটনা ঘটতে থাকে মানুষের সঙ্গে। ধীরে ধীরে ক্রমশ বাড়তে থাকে তার মাত্রা।
ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণার জন্য সমীক্ষা চালানো হয়েছিল মোট ৬৫ জন এই ধরণের স্পিরিচুয়ালিস্টদের ওপর। সেইসঙ্গে আরও ১৪৩ জন সাধারণ মানুষের ওপরেও চালানো হয় সমীক্ষা, যাঁরা এই ধরণের ঘটনার অনুভূতি পাননি কোনোদিন। গবেষকদের সঙ্গে এই সমীক্ষায় অংশ নেয় স্পিরিচুয়ালিস্টস ন্যাশনাল ইউনিয়নও।
এছাড়া ‘মৃতদের শব্দ’ শুনতে পাওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাননি গবেষকরা। তবে ব্রিটেনে বেশ কয়েকটি সংস্থা এই ‘স্পিরিচুয়াল’ মতবাদকে সমর্থন করেন। বেশ রমরম করেই চলে মিডিয়ামদের প্রশিক্ষণ এবং অনুশীলনের কর্মসূচি। এসএনইউ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার দাবি, ব্রিটেনের গীর্জা ও বিভিন্ন অনুশীলন কেন্দ্রে এই মতবাদে বিশ্বাসী কমপক্ষে ১১ হাজার সদস্য রয়েছেন।
তবে বেশ অবাক করেছে সমীক্ষার ফলাফল। ৬৫ জনের মধ্যে ৪৪ জন ব্যক্তিই সমীক্ষা চলাকালীন রোজই শুনতে পেয়েছেন মৃতদের কণ্ঠস্বর। ৩৩ শতাংশ শুনতে পেয়েছেন কেবলমাত্র শেষ দিনে। ৭৯ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে কোনো স্থানের ওপর ভিত্তি করে এমন অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকেন না তাঁরা। যেকোনো পরিস্থিতিতেই তাঁরা শুনতে পান মৃতদের কণ্ঠস্বর। আবার অনেকে এমন রয়েছেন বিশেষ নিরিবিলিতেই কেবলমাত্র যাঁদের অনুভূতি জাগে। তবে একইরকম পরিস্থিতিতে সাধারণদের মধ্যে এই অনুভূতি লক্ষ্য করা যায়নি।
আরও পড়ুন
ক্যানসারের চিকিৎসায় উৎসর্গ করেছিলেন জীবন, প্রয়াত ডঃ বিশ্বনাথন শান্তা
গবেষকদের দাবি, গড়ে ২১.৭ বছর বয়সে প্রথম এই ধরণের ঘটনার সাক্ষী থেকেছিলেন এই ব্যক্তিরা। আশ্চর্যের বিষয় তাঁদের মধ্যে ৭১ শতাংশ মানুষেরই ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল না তার আগে। যা অবাক করেছে বিজ্ঞানীদের। মননশক্তি, অবচেতনা এবং উপলব্ধির তীব্রতার ওপরে গবেষকরা জোর দিলেও, এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এখনই চূড়ান্ত অভিমত জানাতে নারাজ প্রধান গবেষক ডঃ অ্যাডাম পাওয়েল। ভবিষ্যতে আরও বিস্তারিত গবেষণা এবং এই ধরণের ‘স্পিরিট’ বা আত্মার উপস্থিতি সম্পর্কে অনুসন্ধানের জায়গা খোলা রেখে দিয়েছেন তিনি...
Powered by Froala Editor