সার্বিক অনাক্রম্যতা অর্জন অসম্ভব, কোভিড নিয়ে আশঙ্কা গবেষকদের

২০২০ সালের শুরুর দিকের কথা। তখন এক এক প্রায় সব দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। আর তার সংক্রমণ রুখতে কঠিন থেকে কঠিনতম লকডাউনের পথে হাঁটছে প্রতিটি দেশের প্রশাসন। কিন্তু তারপরেও কি রোখা গেছে করোনাভাইরাসকে? এমনকি ভ্যাকসিনের মাধ্যমেও গোটা বিশ্বের মানুষের হার্ড ইউমিউনিটি তৈরি করা সম্ভব হবে না। সম্প্রতি এমনটাই জানালেন লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক ডঃ ডেভিড হেম্যান।

তবে শুরু থেকে যদি প্রতিটা দেশের ক্ষেত্রে কোভিড আক্রান্তের গ্রাফের দিকে দেখলেই বোঝা যাবে, একই গতিতে বৃদ্ধি পায়নি আক্রান্তের সংখ্যা। কখনও তা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তারপর আবার দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে সংক্রমণ। তার একটা কারণ আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আনাগোনা। পাশাপাশি হেম্যান জানাচ্ছেন, প্রতি মুহূর্তেই অভিযোজিত হচ্ছে করোনাভাইরাস। এবং অন্যান্য ভাইরাসের থেকে তার এই অভিযোজন এতই দ্রুত, যে ক্রমশ অধিকতর সংক্রামক হয়ে উঠছে সেটি। 

বিশ্বের আর পাঁচটা গবেষকদের মতো তিনিও সহমত, একমাত্র দ্রুত ভ্যাকসিনেশনই তৈরি করতে পারে অনাক্রম্যতা। তবে এত দ্রুত তার বাস্তবায়ন হওয়া সম্ভব না বলেই মনে করছেন হেম্যান। কেন না একই সময়ে গোটা বিশ্বের মানুষের টিকাকরন কার্যত অসম্ভব। টিকার অসম বণ্টনই তার অন্যতম কারণ। হেম্যান ভারতের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে জানান, বিশ্বে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের একটা বড়ো অংশ ভারতকে দেওয়া হলেও মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে আংশিক টিকাকরণ সম্ভব হয়েছে। সেখানে ভ্যাকসিন পাননি আফ্রিকার অধিকাংশ দেশের স্বাস্থ্যকর্মীরাই। অন্যদিকে ভ্যাকসিন কিনে নেওয়ার প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে ক্ষমতাশালী দেশগুলির মধ্যে। যে সংকট কাটতে এক দশক সময় লেগে যেতে পারে বলেই ধারণা তাঁর।

তবে মারণ ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়? উত্তর দিতে গিয়ে বিগত কয়েক সপ্তাহের পরিসংখ্যান তুলে ধরছেন তিনি। দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও কমেছে মৃতের সংখ্যা। সেখানেই আশার আলো দেখছেন তিনি। হেম্যান-সহ একাধিক গবেষকের অভিমত ভবিষ্যতে স্বাভাবিক ফ্লু-তে পরিণত হবে কোভিড। হ্যাঁ, তখনও বজায় থাকবে তার ঘাতক সত্তা। তবে কমে আসবে মৃত্যুর হার। দূরত্ববিধি বজায়, মাস্ক পরা এবং অন্যান্য প্রোটোকল মেনেই মানুষকে অভ্যস্থ হয়ে উঠতে হবে তার সঙ্গে।

আরও পড়ুন
প্রয়াত নেতাজির সহযোদ্ধা লালতি রাম, করোনা কেড়ে নিল আইএনএ সেনাধ্যক্ষকেও

এর আগে এইডস কিংবা টিউবারকিউলোসিস-এর ক্ষেত্রেও দেখা গেছে একই রকম ঘটনা। এই রোগগুলিকেও পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার সন্ধান দিতে পারেননি গবেষকরা। প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনে তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে মানুষকে। কোভিডের ক্ষেত্রেও বিষয়টা গড়াচ্ছে সেই দিকেই। বলতে গেলে মহামারীকে হারিয়ে প্রাক-কোভিড যুগে ফেরা কার্যত অসম্ভব মানব সভ্যতার কাছে। এমনটাই জানাচ্ছেন হেম্যান-সহ বিশ্বের একাধিক গবেষক…

আরও পড়ুন
সীমান্ত ছেড়ে, করোনা মোকাবিলায় এবার সামিল সামরিক চিকিৎসকরাও

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
রক্তনালিতে 'বিষ' ছড়ায় করোনার স্পাইক প্রোটিন!