সেরে উঠছে লেননের শহরের অন্যতম নদী, উচ্ছ্বসিত পরিবেশবিদরা

জন লেনন এবং ‘দ্য বিটলস’-এর জন্মভূমি লিভারপুল (Liverpool) শহর। আর এই শহরের বুক চিরে বয়ে চলেছে ছোট্ট এক নদী— মারসেই। দৈর্ঘ্য মাত্র ১১০ কিলোমিটার। তবে এই নদীর সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে ব্রিটেনের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, এমনকি ব্যবসাও। তবে নব্বই-এর দশকে এই নদীই হয়ে উঠেছিল সাক্ষাৎ মৃত্যুপুরী। সেখানে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল সামুদ্রিক ও জলজ প্রাণীদের। প্রায় ৭৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল মাছের সংখ্যা। তিন দশক ধরে পরিবেশকর্মীদের অক্লান্ত চেষ্টার পর এবার সুস্থতায় ফিরল মারসেই (Mersey River)। রেহাই পেল হারিয়ে যেতে বসা বাস্তুতন্ত্র।

হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনই আশার কথা শোনালেন মারসেই রিভার্স ট্রাস্টের বিজ্ঞানীরা। বিগত কয়েক দশক ধরেই মারসেইকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই সংগঠন। এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে সরকারি এবং স্বেচ্ছাসেবী একাধিক গবেষক। এবার তাঁদের প্রকাশিত রিপোর্টই জানান দিল, ২০ বছর আগের সমীক্ষার তুলনায় মারসেই নদীতে জলজ প্রাণীর উপস্থিতি বেড়েছে প্রায় আড়াইগুণেরও বেশি। যা যথেষ্ট ইতিবাচক তো বটেই। 

গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই তালিকায় রয়েছে বিশালাকার ঈল, সামুদ্রিক বিছে, পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির হাঙ্গর, টার্বোট, কড মাছ, কচ্ছপ, অটার, শীল, অক্টোপাস, স্যামন ইত্যাদি প্রজাতি। তাছাড়াও সারস, বক-সহ একাধিক প্রজাতির পাখির আনাগোনাও বৃদ্ধি পেয়েছে এই নদীর চরে। এমনকি ১৯৩৮ সালের পর চলতি বছরে প্রথমবারের জন্য হাম্পব্যাক তিমির দেখা মিলেছে মারসেই-এর মোহনাতে। গবেষকদের মতে, মারসেই-এর মোহনা ফের প্রজনন-সক্ষম হয়ে ওঠার কারণেই নদীর বাস্তুতন্ত্রের এই চেহারা-বদল। 

লিভারপুল বিশ্বের বৃহত্তম ‘এনক্লোসড ডক’ বা ঘেরা বন্দর। ফলে, সবসময়ই সেখানে বাণিজ্যিক জাহাজের আনাগোনা লেগেই থাকে। যা এই নদীর অন্যতম দূষণের কারণও বটে। তাছাড়া লিভারপুল শহরের বর্জ্যও ইতিউতি যোগ হয় নদীপ্রবাহে। নব্বই-এর দশকের শেষে নদীতে দূষকের মাত্রা কমানোর জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয় লিভারপুল প্রশাসন এবং মারসেই রিভার্স ট্রাস্ট। নেওয়া হয়েছিল নদী থেকে অজৈব বর্জ্য পৃথকীকরণের প্রকল্প। তাছাড়াও রাসায়নিক দূষক যাতে নদীতে না মেশে, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল প্রতিটি ডকে। আর এই প্রকল্পের সুবাদেই বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অন্যতম দূষণমুক্ত নদী হয়ে উঠেছে মারসেই। 

অবশ্য এখানেই যে দায়িত্ব শেষ হয়েছে, এমনটা মনে করছেন না গবেষকরা। এখনও মারসেই নদী ‘ওয়াইল্ডলাইফোমিটার’ স্কেলে রয়েছে রেড জোনে। অর্থাৎ, তাকে সম্পূর্ণভাবে বন্যপ্রাণীর বাসযোগ্য করে তুলতে এখনও বেশ দেরি আছে বৈকি। তবে এই গতিতে নদীর স্বাস্থ্য ফিরতে থাকলে, আগামী ৩০ বছরের মধ্যেই ইউরোপের পরিচ্ছন্নতম নদী হয়ে উঠবে মারসেই, আশাবাদী গবেষকরা। অনুমান, আগামী পাঁচ দশকের মধ্যেই এই নদীতে ফিরে আসবে আরও ৩৭টি প্রজাতির মাছ-ও!

Powered by Froala Editor