সাদারও সাদা! কেমন এই নব্যাবিষ্কৃত রং?

বছর কয়েও আগের কথা। ভ্যান্টাব্ল্যাক নামের একটি বিশেষ কালো রং-এর শেড আবিষ্কার করেছিলেন গবেষকরা। যা এতটাই কালো, তা থেকে দৃশ্যমান তরঙ্গের আলো প্রায় প্রতিফলিত হয় না বললেই চলে। সমস্ত আলোকশক্তিকে শোষণ করে নেয় এই রং। ফলে, দিনেরবেলাতেও ভ্যান্টাব্ল্যাকের প্রলেপ প্রায় চোখে পড়ে না বললেই চলে। ঠিক একইভাবে পরম সাদা রং-ও সূর্যালোক বা দৃশ্যমান আলোকে শোষণ করে না বিন্দুমাত্র।

হ্যাঁ, তাত্ত্বিকভাবে এমনটাই ধরে নিই আমরা। ধরে নিই সাদা রং (White Color) মাত্রই ১০০ শতাংশ আলোকে শোষণ করে নেয়। কিন্তু বাস্তবে ঘটে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাজার-চলতি যেসব সাদা রিফ্লেক্টিং পেইন্ট রয়েছে, তাদের সকলেরই প্রতিফলন ক্ষমতা ৮০-৮৫ শতাংশ। ফলে তাপশক্তির শোষণ এড়ানো যায় না কোনোভাবেই। এই সমস্যার সমাধান করতেই মাঠে নেমেছিলেন পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। দীর্ঘ ৬ বছর গবেষণার পর এবার তাঁর বানিয়ে ফেললেন বিশ্বের সাদার চেয়েও সাদা পেইন্ট। হ্যাঁ, এখনও পর্যন্ত এটিই মানবসৃষ্ট সবচেয়ে সাদা রং। কিন্তু কী দিয়ে তৈরি হল এই পদার্থ?

প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন বিভিন্ন ধাতব লবণের আপেক্ষিক তাপ নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। সেখান থেকেই উঠে আসে বেরিয়ামের লবণ অন্যান্য ধাতুর লবণের থেকে স্বল্প মাত্রায় তাপ শোষণ করে থাকে। তারপর শুরু হয় এই লবণের অধাতব অংশটি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় নাইট্রেট, ক্লোরেট কিংবা অন্যান্য লবণের থেকে বেরিয়ামের সালফেট লবণ দৃশ্যমান আলোর ক্ষেত্রে প্রায় দুর্ভেদ্য। অর্থাৎ, ৯৮.১ শতাংশ আলোই প্রতিফলিত হয় বেরিয়াম সালফেটের প্রলেপ থেকে। শুধু তাই নয়, বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তাপীয় তরঙ্গকেও অনায়াসে প্রতিফলিত করতে পারে এই রং। ফলে শুধু উজ্জ্বলতমই নয়, শীতলতম রং-ও এই বিশেষ পেইন্টটি। 

গবেষকদের মতে, ১০০০ বর্গফুটের দেওয়ালে বেরিয়াম সালফেটের ব্যবহার ১০ কিলোওয়াট ক্ষমতা শক্তি কম শোষিত হয়। যা অবাক করার মতোই। কিন্তু বাড়তি কী সুবিধা হবে এই রং-এ? গবেষকরা জানাচ্ছেন, সাধারণত, পৃথিবীর সমস্ত পদার্থই আলোক শক্তির শোষণ করে। আর তার ফলে, বৃদ্ধি পায়ে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য। পরিবর্তিত হয় তাপীয় তরঙ্গে। বড়ো তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সেই তরঙ্গ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে বেরতে পারে না। হয়ে ওঠে উষ্ণায়নের কারণ। বেরিয়াম সালফেটের ব্যবহারে এই বিষয়টিকেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে অনেকটা। তাতে খানিকটা হলেও ঠাণ্ডা থাকবে পৃথিবী। পাশাপাশি এই রং-এর ব্যবহারে এয়ার কন্ডিশনার বা শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহারও কমবে বলে আশাবাদী গবেষকরা। সেক্ষেত্রে হাইড্রোফ্লুরো কার্বন বা ক্লোরোফ্লুরো কার্বনের নির্গমনও নিয়ন্ত্রণে আসবে। সবমিলিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়নকে ঠেকাতে এই রং যে মানুষের বড়ো হাতিয়ার হয়ে উঠতে আগামীদিনে, তা বলার অপেক্ষা থাকে না…

Powered by Froala Editor