উচ্চতা ১ মিটার। ওজন ২৩-২৫ কেজি। অথচ, এই লম্বা, ভারি দেহ নেই দিব্যি উড়তে পারত তারা। ডোডো পাখি। অ্যালিসের রূপকথা তো বটেই, বিভিন্ন সময়ে নানান গল্প-কবিতায় ফিরে ফিরে এসেছে এই আশ্চর্য পাখির বর্ণনা। সপ্তদশ শতকের শুরুতেও মরিশাস দ্বীপে দেখা মিলত দু-একটি ডোডোর। তবে মানুষের আগ্রাসন চিরতরে মুছে দিয়েছে তাদের। এখন ডোডোপাখি (Dodo Bird) ইতিহাসের একটি অধ্যায় মাত্র।
তবে কয়েকশো বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই প্রাণীটিই আবার ফিরে আসতে চলেছে পৃথিবীর বুকে। নেপথ্যে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা ‘কলোসাস’ (Colossus Biosciences)। গত মঙ্গলবারই এই সংস্থার তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, হারিয়ে যাওয়া এই প্রজাতিকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে সর্বস্তরে। কিন্তু কীভাবে ফের জন্ম নেবে ডোডো পাখি? যাঁদের অস্তিত্ব চিরতরে হারিয়ে গেছে, তাদের কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব?
কল্পবিজ্ঞান বহু আগেই বলেছে সম্ভব। স্পিলবার্গের ‘জুরাসিক পার্ক’ দেখিয়েছিল প্রাচীন অ্যাম্বারে আটকে যাওয়া একটি মশার পেট থেকে ডাইনোসরের রক্ত সংগ্রহ করেই ডাইনোসর ফিরিয়ে আনেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে বাস্তবে এমনটা সম্ভব কিনা, তা নিয়ে দীর্ঘদিনই বিতর্কে জড়িয়েছেন গবেষকরা। এই জল্পনার রেশ টেনে ২০১৫ সালে তাত্ত্বিকভাবে পথে দেখান মার্কিন গবেষক ডঃ ব্রেথ স্যাপাইরো। তত্ত্ব দিয়ে দেখান প্রাচীন জীবাশ্ম এবং পার্মাফ্রস্ট ম্যামথের জিন সংগ্রহ করে নতুন করে তৈরি করা সম্ভব ম্যামথকে। ‘হাউ টু ক্লোন আ উলি ম্যামথ’— তাঁর লেখা এই গ্রন্থটিও বিস্তর জনপ্রিয় হয়েছিল সে-সময়।
এরপরই মাঠে নামে বায়োইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা ‘কলোসাস বায়োসায়েন্সেস’। জীবাশ্ম থেকে সংগ্রহ করা জিনের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করেই ক্লোন তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই সংস্থা। লক্ষ্য মূলত তিনটি প্রাণী— উলি ম্যামথ, তাসমানিয়ান টাইগার এবং ডোডো পাখি। অবশ্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায়, থিতিয়ে পড়েছিল এই গবেষণা। সম্প্রতি এই প্রকল্পে ১৫ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থায়ন করেন এক মার্কিন বিলিয়নেয়ার। আর তাতেই খানিক স্বস্তি ফিরেছে গবেষকদের মধ্যে। নতুন করে আশা দেখাচ্ছে মার্কিনব বায়োইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থাটিও। দাবি আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পৃথিবীতে ফের জন্ম নিতে পারে ডোডো পাখি।
মরিশাস থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছিল বেশ কিছু ডোডোর অস্থি এবং জীবাশ্ম। সেগুলি থেকেই জিনোম পৃথকীকরণের কাজ চলছে বর্তমানে। তারপর ল্যাবরেটরিতে সেগুলি দিয়েই বানানো হবে কৃত্রিম ভ্রূণ। অনেকটা ল্যাবরেটরিতে জন্ম নেওয়া ভেড়া ‘ডলি’-র মতোই। অবশ্য ভেড়া স্তন্যপায়ী হওয়ায় সেই কাজ খানিক সহজ হয়েছে বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে ভ্রুণ তৈরির পরবর্তী প্রক্রিয়াতত্ত্বকে বাস্তবায়িত করা বেশ চ্যালেঞ্জিং।
এই গবেষণা সফল হলে, জীববিদ্যার এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। এমনকি গবেষকরা এও জানাচ্ছেন, হারানো এইসব প্রজাতিকে প্রকৃতিতে ফেরাতে পারলে, খানিকটা হলেও হারিয়ে যাওয়া বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, ডারউইনের ‘সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট’-এর সূত্রকে হার মানিয়ে কৃত্রিমভাবে ল্যাবরেটরিতে তৈরি এই পাখি কি আদৌ বাঁচতে পারবে পৃথিবীর বুকে?
Powered by Froala Editor