পাঁচেই শেষ নয়, পদার্থের নতুন দশার হদিশ পেলেন গবেষকরা

বর্তনীতে নেই কোনো ব্যাটারি। আলাদা করে ব্যবস্থা নেই কোনো শক্তি সরবরাহেরও। কিন্তু তার পরেও নিরবচ্ছিন্নভাবেই পরিবাহিত হচ্ছে বিদ্যুৎ। শুনতে খানিকটা অস্বাভাবিক লাগলেও আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান বহু বছর আগেই সম্ভব করে দেখিয়েছে এই অসম্ভবকে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় সুপারকন্ডাকটিভিটি বা অতিপরিবাহিতা। আর সুপারকন্ডাকটিভিটির মূল নীতিই হল ইলেকট্রন-জোড় তৈরি করা। তবে ইলেকট্রন জোড়ই নয়, এবার পরীক্ষাগারে ইলেকট্রনের কোয়াড্রুপ্লেট (Electron Quadruplet) বা চারটি ইলেকট্রনের সংযুক্ত বন্ধন গঠন করে দেখালেন রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষক ইগর বাবায়েভ। ইলেকট্রন বন্ধনের এই বিশেষ দশা পদার্থের নতুন অবস্থার হদিশ দিচ্ছে বলেই অভিমত বিজ্ঞানীদের। সম্প্রতি, নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হল সাম্প্রতিক এই আবিষ্কারের কথা।

তবে এই ধরণা আজকের নয়। আজ থেকে দু’দশক আগের কথা। ইলেকট্রন তথা ফার্মিয়ন গোত্রের একই চরিত্রের কণাদের মধ্যে কোয়াড্রুপ্লেট তৈরি হতে পারে, তার তাত্ত্বিক প্রমাণ দিয়েছিলেন স্বয়ং ইগর। কিন্তু বাস্তবে তার পরীক্ষামূলক প্রমাণ পাওয়ার মতো পরিকাঠামো ছিল না সেইসময়। পাশাপাশি বাবায়েভের সেই তত্ত্বের সম্পর্কেও দ্বিমত পোষণ করেছিলেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। 

আট বছর আগে শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ পায় বাবায়েভের গবেষণাপত্রটি। তারপরই খোঁজ শুরু হয়েছিল তাত্ত্বিক ফার্মিয়ন কোয়াড্রুপ্লেটের। সম্প্রতি লৌহভিত্তিক সুপারকন্ডাক্টার বা অতিপরিবাহী নির্মাণের মাধ্যমেই এবার হদিশ মিলল সেই বিশেষ ভৌত দশার। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম ‘ফোর-ফার্মিয়ন কনডেনসেট’ (Four Fermion Condensate)। হ্যাঁ, বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেটেরই একটি বিশেষ দশা এটি। কিন্তু তারপরেও পঞ্চম দশা না বলে কেন পদার্থের নতুন দশা হিসাবে অভিহিত করা হচ্ছে ফার্মিয়ন কোয়াড্রুপ্লেটকে?

সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে বুঝতে হবে বার্ডিন-কুপার-শ্রিফারের তত্ত্ব। আর সেখানেই টাইম-রিভার্সাল সিমেট্রি বা সময়-বিপরীত প্রতিসাম্যের প্রসঙ্গ আসতে বাধ্য। বিষয়টি কেমন? ধরা যাক, কোনো একটি ঘটনাকে পর্যবেক্ষণের সময় সময়ের কাঁটা উল্টে দেওয়া হল কিংবা সহজভাষায় বলতে গেলে অভিমুখ বদলে দেওয়া হল সেই নির্দিষ্ট ঘটনাটির। তাতে মূল ঘটয়ার অভিব্যক্তি ঠিক বিপরীত হয়ে গেলেও, পদার্থবিদ্যার মৌলিক নীতিগুলির কোনো বদল হয় না। টাইম-রিভার্সাল সিমেট্রির এই তত্ত্ব সুপারকন্ডাক্টরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এবং তা পরীক্ষাগতভাবে প্রমাণিতও বটে। 

আরও পড়ুন
ব্ল্যাকহোলের গ্রাসে নক্ষত্রও! খুলল পদার্থবিদ্যার নতুন দিগন্ত

তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, ফোর-ফার্মিয়ন কনডেনসেটের ক্ষেত্রে প্রতিসাম্যের এই নীতি অক্ষুণ্ণ থাকে না। পাশাপাশি থার্মাল গ্র্যাডিয়েন্ট, চুম্বক ক্ষেত্র, আলট্রাসাউন্ড-সহ একাধিক ভৌত রাশির মধ্যেও অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ করা যায় এই বিশেষ অবস্থায়। আর সেই নিরিখেই পদার্থের চেনা পাঁচটি অবস্থার মধ্যে এটিকে রাখতে নারাজ গবেষকরা। তবে অভিনব এই অবস্থাকে বুঝতে গেলে বৃহত্তর পরিসরে আরও গবেষণার পরিসর প্রয়োজন বলেই মনে করছেন রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ইগর বাবায়েভ। আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে বঙ্গসন্তান সত্যেন্দ্রনাথ বসুর হাত ধরেই পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটেছিল পদার্থের। তার এক যুগ পরে আবার পদার্থের নতুন অবস্থার খোঁজ পেলেন গবেষকরা। ফলত, সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার ঘিরে উন্মাদনার শেষ নেই পদার্থবিদদের…

আরও পড়ুন
নোবেলজয়ী পদার্থবিদদের এক-চতুর্থাংশই ‘শরণার্থী’!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
স্টিফেন হকিং-এর কাছে তিনি ‘গ্রেটেস্ট’, বিস্মৃতির অতলে বাঙালি পদার্থবিদ জে এন ইসলাম