চুম্বক জিনিসটাকে আজ আমাদের যতই মামুলি বলে মনে হোক, এর আবিষ্কার মানুষকে অবাক করেছিল নিশ্চয়ই। যদিও খুব শক্তিশালী না হলেও দুর্বল চৌম্বকক্ষেত্রের হদিশ প্রকৃতির নানা স্থানেই ছড়িয়ে রয়েছে। এমনকি মানুষের শরীরে রক্ত পরিবহণের মাধ্যমেও চৌম্বকক্ষেত্রের জন্ম হয়। কিন্তু গাছেদের শরীরেও কি আছে চৌম্বকক্ষেত্র? গাছেদের তো রক্ত নেই। অতএব তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই ধরে নিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। অথচ সম্প্রতি জার্মানির একদল উদ্ভিদবিজ্ঞানী হাজির করলেন সেই অবাক-করা তথ্যই। হ্যাঁ, গাছের শরীরেও আছে চৌম্বকক্ষেত্র।
‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ নামের একধরণের পতঙ্গভুক উদ্ভিদের শরীরে রয়েছে অতি ক্ষীণ চৌম্বকক্ষেত্র। ক্ষীণ হলেও তার গুরুত্ব যথেষ্ট। যদিও পুরনো আমলের যন্ত্রপাতিতে তার হদিশ মেলে না। বিজ্ঞানীরা তাই এক্ষেত্রে বেছে নিয়েছিলেন হাল আমলের অ্যাটোমিক ম্যাগনেটোমিটার। গবেষণাপত্রের লেখক অ্যানে ফ্যাব্রিকেন্ট জানিয়েছেন, যে চৌম্বকক্ষেত্র তাঁরা পেয়েছেন তার মাত্রা প্রায় ০.৫ পিকোটেসলা। আর পতঙ্গদের টেনে এনে শিকার করার কাজেই এই ক্ষমতা ব্যবহার করে ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ।
প্রকৃতির মধ্যে এমন কত না অবাক করা তথ্য লুকিয়ে আছে। একসময় তো উদ্ভিদের উত্তেজনায় সাড়া দেওয়ার বিষয়টিও ছিল নিতান্ত আজগুবি। আচার্য জগদীশচন্দ্র তাকে বিজ্ঞানে পরিণত করেছিলেন। স্পষ্ট স্নায়ুতন্ত্রের অস্তিত্ব ছাড়াই উত্তেজনায় সাড়া দেয় উদ্ভিদ। আর এবার দেখা গেল রক্তচলাচল ছাড়াই চৌম্বকক্ষেত্রও তৈরি হচ্ছে। হয়তো শুধুই ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ নয়, সমস্ত উদ্ভিদের মধ্যেই অতি ক্ষীণ চৌম্বকক্ষেত্র রয়েছে। শুধু তাদের সন্ধান পাওয়ার জন্য চাই অতি সূক্ষ পরিমাপের যন্ত্র। এই আবিষ্কার এমন নানা সম্ভাবনার পথ খুলে দিল বলেই মনে করছেন অ্যানে ফ্যাব্রিকেন্ট। আর শিকারী উদ্ভিদের চরিত্র বোঝার ক্ষেত্রে যে এই আবিষ্কার অতি গুরুত্বপূর্ণ, সেকথা বলাই বাহুল্য।
Powered by Froala Editor