বিশ্বের প্রাণীজগৎ এবং তার বৈচিত্রের সম্পূর্ণ রহস্য আজও অধরা মানুষের কাছে। নিত্যদিনই বিজ্ঞানীরা উন্মোচন করছেন নতুন নতুন রহস্য। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এল এমনই এক চমকপ্রদ আবিষ্কার। নিউজিল্যান্ডের সমুদ্রের তলায় বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেলেন কাইটফিন হাঙরের একটি প্রজাতি, যা অন্ধকারেও উজ্জ্বল, অর্থাৎ প্রতিপ্রভ। যার দৈর্ঘ্য ৬ ফুট। হাঙর তো বটেই, পৃথিবীতে প্রাপ্ত অন্যান্য যে-কোনো প্রজাতির প্রতিপ্রভ প্রাণীদের নিরিখেও যা সর্ববৃহৎ।
গত বছরের জানুয়ারি মাসের কথা। বিজ্ঞানীরা প্রথম সন্ধান দিয়েছিলেন প্রতিপ্রভ হাঙরের। নিউজিল্যান্ডেই তাঁরা খুঁজে পেয়েছিলেন বায়োলুমিনেসেন্ট হাঙরের তিন তিনটি প্রজাতি— কাইটফিন শার্ক, ব্ল্যাকবেলি ল্যানটার্ন শার্ক এবং সাউদার্ন ল্যানটার্ন শার্ক। তাদের বসবাস সমুদ্রের মেসোপেলাজিক অঞ্চলে। অর্থাৎ, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ৬৬০-৩৩০০ ফুট গভীরতায় দেখা যায় তাদের অস্তিত্ব।
তবে এতদিন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সর্ববৃহৎ বায়োলুমিনেসেন্ট হাঙরের দৈর্ঘ্য ছিল বড়োজোর ২০ সেন্টিমিটার। তবে সাম্প্রতিক আবিষ্কার ভেঙে দিল সেই ধারণাকেই। তবে সদ্য আবিষ্কৃত এই হাঙরের আকারের থেকেও তার দ্বিতীয় পৃষ্ঠপাখনাটি বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বিজ্ঞানীদের। কারণ কাইটফিন প্রজাতির এই হাঙরের দেহে সবথেকে উজ্জ্বলতম অংশ হল এই পাখনাটিই। তবে তার বিশেষ গুরুত্ব বা তা কী কাজে ব্যবহৃত হয়— এখনও পরিষ্কার নয় বিজ্ঞানীদের কাছে।
তবে শুধু পাখনাই নয়, এই প্রজাতির হাঙরগুলির সারা শরীরেই রয়েছে প্রতিপ্রভার ক্ষমতা। গবেষকদের অনুমান যাতে গভীর সমুদ্রের তলা থেকে অন্য কোনো বড়ো শিকারি প্রাণী যাতে চিহ্নিত করতে না পারে তাদের, সে জন্যই এই ‘প্রতিরক্ষা’ ব্যবস্থা। যা সমুদ্রপৃষ্ঠের আলোর সঙ্গে আত্মগোপন করে সহায়তা করে এই হাঙরদের।
আরও পড়ুন
মেরু-পরিবর্তনের কারণেই বিলুপ্ত বহু প্রজাতি, জানাচ্ছে গবেষণা
আরও একটি আকর্ষণীয় বিষয় হল এই বায়োলুমিনেসেন্সের কারণ। জোনাকি, বিভিন্ন শৈবাল, ছত্রাক, উদ্ভিদ, কিছু গভীর সমুদ্রের মাছের ক্ষেত্রেও দেখা যায় প্রতিপ্রভা। প্রতিক্ষেত্রেই তার কারণ লুসিফেরিন নামক একটি রাসায়নিক যৌগ। তবে প্রতিপ্রভ হাঙররা প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করে সম্পূর্ণ ভিন্ন কোনো পদ্ধতিতে। সেই রহস্যেরও সমাধান মেলেনি এখনও। কাজেই থেমে নেই গবেষকদের অনুসন্ধান। অজানা তথ্যের খোঁজ পেতেই মুখিয়ে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
‘মিনি কাজিরাঙা’-র জলাশয়ে ভিড় জমায় ৫৮ প্রজাতির পাখি, জানাচ্ছে সমীক্ষা