নিউট্রনের মাধ্যমে বার্তাপ্রেরণ, নতুন যোগাযোগ মাধ্যমের হদিশ দিলেন বিজ্ঞানীরা

একটা সময় বার্তা বা বিপদ সংকেত প্রেরণ করতে ব্যবহৃত হত ফ্লেয়ার, সেমাফোরের মতো যন্ত্র। তবে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পর পাল্টে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থার পুরো ধারণাই। টেলিগ্রাফের সৌজন্যে মুহূর্তে বার্তা পাঠানোর সুযোগ থেকে শুরু করে বেতার কিংবা আজকের ইন্টারনেট— এই সবকিছুর নেপথ্যেই রয়েছে বিদ্যুৎ। বা, আরও ভালো করে বলতে গেলে তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ। কিন্তু তাছাড়াও কি ডিজিটাল তথ্য স্থানান্তরিত (Data Transmission) করা যায় না? এবার তেমনই এক অভিনব পন্থার হদিশ দিলেন গবেষকরা। 

যুক্তরাজ্যের ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্লোভানিয়ার জোজেফ স্টেফান ইনস্টিটিউটের গবেষকদের যৌথ গবেষণায় এবার দ্রুত গতি সম্পন্ন নিউট্রনের (Neutron) মাধ্যমে সম্ভব হল তথ্যপ্রেরণ। কিন্তু কীভাবে কোনো তরঙ্গ ছাড়াই ওয়্যারলেস সংযোগ তৈরি করলেন গবেষকরা?

এই কর্মকাণ্ডের জন্য মূলত তেজস্ক্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েছেন তাঁরা। পারমাণবিক চুল্লিতে প্রাপ্ত ক্যালিফোর্নিয়াম মৌলটিই এই সংযোগমাধ্যমের অন্যতম চাবিকাঠি। এই বিশেষ মৌলের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ক্যালিফোর্নিয়াম-২৫২ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিউট্রন নির্গমন করে থাকে। মডিউলেটরের মাধ্যমে সেই নিউট্রনের নির্গমন মাত্রা পরিবর্তন করেই যেকোনো বার্তা এনকোড করেছেন গবেষকরা। তারপর ডিটেক্টরের সাহায্যে সেই নিউট্রন প্রবাহের বিশ্লেষণের মাধ্যমে পুনরায় তা ডিকোড করা হয়েছে কম্পিউটারের মাধ্যমে।

শুধু শব্দ বা বর্ণ নয়। বরং, নিউট্রন প্রবাহের সাহায্যে শব্দ এবং সম্পূর্ণ বাক্যের তথ্যও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা। এখনও পর্যন্ত সমস্ত ট্রান্সমিশন পরীক্ষাই ১০০ শতাংশ সফল হয়েছে। যা রীতিমতো চমকে দিয়েছে স্বয়ং আবিষ্কর্তাদেরও। 

আরও পড়ুন
কোভিডের কারণে লাফিয়ে বেড়েছে প্লাস্টিক দূষণ, শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা

তবে সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয় হল, নিউট্রন তড়িৎবিহীন হওয়ায় এই বিশেষ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরাপদভাবেই ব্যবহৃত হতে পারে বিমানের মধ্যে কিংবা মোবাইলের ব্যবহার নিষিদ্ধ এমন অঞ্চলে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত বার্তাপ্রেরণের যে-সমস্ত প্রযুক্তি জানা রয়েছে, তার মধ্যে সবথেকে উন্নত ধরনের মডিউলেশন সম্ভব নিউট্রনের মারফতেই। কারণ, নিউট্রন-ভিত্তিক টেলিগ্রাফ ডিকোড করা অত্যন্ত কঠিন বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা। আগামীদিনে নিরাপদে বার্তা পাঠাতে এই প্রযুক্তিকেই হয়তো বেছে নেবে পৃথিবী। তবে প্রতিবন্ধকতা একটাই তেজক্রিয় মৌলের উপস্থিতি ছাড়া, নিউট্রন বিকিরণ ঘটানো অসম্ভব। কিন্তু কে বলতে পারে আজ নয়তো কাল, সেই সমস্যার সমাধানও হয়তো বার করে ফেলবে বিজ্ঞান…

আরও পড়ুন
সর্বাধিক মহাকর্ষীয় তরঙ্গের হদিশ, নতুন রহস্য চিনছেন বিজ্ঞানীরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ক্যানসারের সঙ্গে বংশগতির যোগসূত্রের আবিষ্কারক ভারতীয় বিজ্ঞানীর স্মরণে আজকের গুগল ডুডল