শীতকালে শুষ্কতা বাড়ে ত্বকের। হাতে হালকা আঁচড় লাগলেই দাগ হয়ে যায়। খড়ি ওঠে। আসলে এর নেপথ্যে রয়েছে মানুষের ত্বকের মৃত কোশগুলি। শুধু শীতকালেই নয়, সারাবছরই প্রতিদিন মারা যায় মানুষের ত্বকের হাজার হাজার কোশ। কখনও তা জলবাহিত হয়ে পৌঁছায় নিকাশি ব্যবস্থায়। কখনও আবার বায়ুতে মিশে যায় ধুলিকণা হিসাবে। কিন্তু বায়ু কিংবা বর্জ্য জল থেকে যদি মানুষের এই কোশগুলিকে সংগ্রহ করা যায়? তবে কি মানুষের ডিএনএ বা জেনেটিক তথ্যের (Genetic Data) নাগাল পাওয়া সম্ভব?
এতদিন পর্যন্ত সভ্যতার কাছে সম্পূর্ণ অবাস্তব ছিল এই প্রশ্ন। বায়ু থেকে মানুষের ডিএনএ সংগ্রহ করা সম্ভব, তা কল্পনাও করা যেত না দুঃস্বপ্নে। তবে সম্প্রতি এই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখালেন গবেষকরা। বায়ু এবং বর্জ্যজল থেকে শুধু মানুষের ত্বকের মৃতকোশ সংগ্রহই নয়, বরং তাঁর বিশ্লেষণ করে ডিএনএ উদ্ধার করে দেখালেন ফ্লোরিডার বন্যপ্রাণী জেনেটিসিস্ট ডঃ ডেভিড ডাফি এবং তাঁর সহকর্মীরা। এবং এই ডিএনএ থেকে চিকিৎসার ইতিহাস, এমনকি বংশধারা সম্পর্কিত একাধিক তথ্যও সংগ্রহ করতে সফল হয়েছেন তাঁরা।
বছর তিনেক আগের কথা। ২০২০ সালে গোটা বিশ্বজুড়ে থাবা বসায় কোভিড মহামারী। কোন কোন অঞ্চলে বেশি মাত্রায় ছড়িয়েছে সংক্রমণ— তা চিহ্নিত করতেই গবেষণা শুরু করেছিলেন ডেভিড। সে-সময় নিকাশি ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্গত বর্জ্য জল সংগ্রহ করে ভাইরাস চিহ্নিত করার ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছিলেন তিনি। তাছাড়াও কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের বায়ুতে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করাও ছিল তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র।
হ্যাঁ, এই গবেষণায় সাফল্য পেয়েছিলেন তিনি। ফিউচারিজম পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর সেই গবেষণাপত্র। তবে করোনাভাইরাস শনাক্ত করার সঙ্গে সঙ্গেই বায়ু এবং বর্জ্য জল থেকে বহু মানুষের দেহকোশের নমুনাও পেয়েছিলেন তিনি। প্রাথমিকভাবে সেগুলি দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি তাঁর। তবে পরবর্তীতে তাঁকে ভাবিয়ে তোলে অন্য একটি ভাবনা। বায়ু থেকে সংগৃহীত নমুনা থেকে যদি ভাইরাস শনাক্ত করা যায়, তবে কি মানুষের মৃত দেহকোশ থেকে জানা যাবে না তার বংশধারা?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই মৃত দেহকোশের বিশ্লেষণ শুরু করেছিলেন ডঃ ডাফি। তাঁর এই গবেষণাই এবার প্রমাণ করল মৃত দেহকোশ থেকে একাধিক ব্যক্তিগত তথ্য খুঁজে বের করা সম্ভব। তবে নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্র ঘিরে ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে নতুন আশঙ্কা। বায়ু কিংবা বর্জ্যজলে মিশে থাকা মানুষের ডিএনএ-এর নমুনা অপরাধীদের হাতে পৌঁছালে, ভয়াবহ পরিণতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে আগামীদিনে। এমনকি অপরাধীরা তৈরি করে ফেলতে পারে আস্ত ডেটাবেস বা তথ্যভাণ্ডার। পরবর্তীতে যা ব্ল্যাকমেলিং-এর কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলেই আশঙ্কা গবেষক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর একাংশের। যেমন, ইতিমধ্যেই জাতিগতভাবে সংখ্যালঘুদের ডিএনএ অধ্যয়ন এবং সেই তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেছে চিন। আগামীতে অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জেনেটিক তথ্য সংগ্রহ করতে এই পথেই হাঁটতে পারে চিন, আশঙ্কা গবেষকদের। ফলে প্রভাবিত হবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা…
Powered by Froala Editor