শরীরের কোনো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হলে, দেহের বৃহত্তর স্বাস্থ্যের জন্য অনেকসময়ই অস্ত্রোপচার (Surgery) করে বাদ দেওয়া হয় সেই অঙ্গ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় অ্যাম্পিউটেশন (Amputation)। শল্য চিকিৎসার এই বিশেষ পদ্ধতির উল্লেখ পাওয়া যায় সুশ্রুতের গ্রন্থে। তবে তারও বহু বছর আগে থেকেই চিকিৎসার এই কৌশল আয়ত্ত করেছিল প্রাচীন মানব। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনল ৩১ হাজার বছর আগের একটি কঙ্কাল।
বছর দুয়েক আগের কথা। ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও দ্বীপপুঞ্জের লিয়াং টোবো গুহায় প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে গিয়েছিল আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি বিশেষ দল। সেই অভিযানে গিয়েই গবেষকরা সন্ধান পান একটি মানব-কঙ্কালের। তবে আকর্ষণের বিষয় হল, কঙ্কালটির দেহে অনুপস্থিত ছিল একটি পা। অর্থাৎ, পায়ের পাতা থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ কাটা পড়েছিল কোনোভাবে। প্রাথমিকভাবে গবেষকরা ভেবেছিলেন, কোনো বন্য প্রাণীর আক্রমণেই হয়তো পা হারিয়েছিলেন এই ব্যক্তি। তবে হাড়ের বিশ্লেষণে উঠে আসে ভিন্ন তথ্য।
গবেষকরা দেখেন, হাড়টি কাটা পড়েছিল অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে। পাশাপাশি সেখান থেকে পরবর্তীতে বৃদ্ধিও পেয়েছে হাড়ের প্রান্তভাগ। রহস্য সমাধান করতে হাড়ের জিনগত বিশ্লেষণ ও বয়স নির্ণয় করা হয়। জানা যায়, ওই ব্যক্তির পা কাটা পড়েছিল শৈশবেই। অঙ্গচ্ছেদের পরেও অন্ততপক্ষে ৬৯ বছর বেঁচেছিলেন ব্যক্তিটি। এমনক তাঁর ক্ষতও সম্পূর্ণ সেরে উঠেছিল বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা। বাকি জীবন কাঠের ওপর ভর করেই হাঁটা চলা করেছেন এই ব্যক্তি।
আশ্চর্যের বিষয় হল, কার্বন ডেটিং জানাচ্ছে এই প্রাচীন মানুষের বয়স প্রায় ৩১ হাজার বছর। বোর্নিও-র মতো দ্বীপে সে-সময়ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই উন্নতি রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতোই। এর আগে ৭ হাজার বছরের পুরনো এক কঙ্কালের অবশিষ্টাংশ খুঁজে পেয়েছিলেন গবেষকরা। সেই প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারটিকেও এতদিন পর্যন্ত অঙ্গচ্ছেদের প্রাচীনতম নিদর্শন বলে ধরে নেওয়া হত। তবে সাম্প্রতিক আবিষ্কারে শল্য-চিকিৎসার ইতিহাস পিছিয়ে গেল আরও ২৫ হাজার বছর…
Powered by Froala Editor