থর মরুভূমির বুক চিরে বয়ে যেত নদী, প্রমাণ পেলেন বিজ্ঞানীরা

ধূধূ প্রান্তর। যত দূর দেখা যায় শুধু বালি আর বালি। আর মরীচিকা। জলের নাম-গন্ধও নেই বিন্দুমাত্র। পশ্চিম ভারতের চেহারা এমনটাই। রাজস্থান জুড়ে সেখানে রাজত্ব রুক্ষ-শুষ্ক থর মরুভূমির। তবে এককালে এই অঞ্চলের ওপর দিয়েই বয়ে যেত জলধারা। কালের প্রবাহেই শুকিয়ে গেছে সেই নদী। সম্প্রতি ১ লক্ষ ৭২ হাজার বছর আগের হারিয়ে যাওয়া সেই নদীরই সন্ধান দিলেন বিজ্ঞানীরা।

থর মরুভূমির কেন্দ্রীয় অঞ্চল বিকানিরের কাছে এই নদীর অস্তিত্ব ছিল বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের। প্রস্থর যুগে মানুষের কাছে অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ছিল এই নদীপ্রবাহ। আরও পশ্চিমের ভূভাগ থেকে মানুষের পরিযায়নের জন্যও ভূমিকা রেখেছিল এটি। গবেষণা অনুযায়ী এই নদীটিই থর অঞ্চলের এখনও অবধি সবথেকে পুরনো জলপ্রবাহ।

সম্প্রতি কোয়ার্টারনারি সায়েন্স রিভিউ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র। গবেষণায় যুক্ত ছিলেন চেন্নাইয়ের আন্না বিশ্ববিদ্যালয় এবং জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের গবেষকরা। এর আগেও থরের বুকে প্রাচীন নদীপথের সন্ধান দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ৮০-৯০ হাজার বছর আগে অস্তিত্ব ছিল লুনি নদীর। আরও দক্ষিণে মাহি, সবরমতী এবং ওরসাঙ্গ নদী উপত্যকা সজীব ছিল ১ লক্ষ বছর আগেও। তবে এত প্রাচীণ কোনো নদীপথের সন্ধান এই প্রথম।

কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, কীভাবে প্রকাশ্যে এল এই তথ্য? নদী উপত্যকা অঞ্চলের বালিপাথরের কোয়ার্জের লুমিনেসেন্স ডেটিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এই রহস্যের সমাধান করেছেন বিজ্ঞানীরা। কোন পাথর শেষ সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এসেছিল, তা নির্ধারণ করেই নদীর বয়স বলেছে এই গবেষণা।

কিন্তু কীভাবে মৃত্যু হল এইসব প্রবাহের? আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হেমা অচ্যুত্থান জানাচ্ছেন, থরে অসংখ্য প্যালিও চ্যানেল থাকার পাশাপাশি ছিল বালিয়াড়িও। ধীরে ধীরে সেই বালিয়াড়ির ক্ষয়ের মাধ্যমেই শোষিত হয় নদীর প্রাণধারা। শেষে উপত্যকা বালিতে ঢাকা পরে একসময় থেমে যায় প্রবাহ। এই আবিষ্কারের পরেই নতুন করে উত্তেজনা উসকে দিচ্ছে থর মরুভূমি। এই রহস্যই এখন সকলকে নতুন করে ভাবাচ্ছে, কেমন ছিল পশ্চিমের এই হলুদ রুক্ষ ভূমি? সবুজ-সজীব?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বনপথ ধরে--মাহালদি নদী, শুকনা-সেভকের জঙ্গল