যতদূর চোখ যায়, বরফের পর বরফ। গ্রিনল্যান্ডের শীতল মরুভূমিতে জলের অস্তিত্ব দেখা পাওয়া যাবে না কোথাও। কিন্তু এসবের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে আস্ত এক নদী। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এল তেমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়, ওসলো বিশ্ববিদ্যালয়, ইউট্রেচ বিশ্ববিদ্যালয় এবং নরওয়েজিয়ান পোলার ইনস্টিটিউটের যৌথ গবেষণায় প্রকাশিত হয় এই তথ্য। গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ক্রায়োস্ফিয়ার বিজ্ঞান পত্রিকায়। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহের বরফের চাদরের তলা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে একটি নদী। যার উৎপত্তি সাবগ্লেসিয়াল উপত্যকা থেকে। শেষ পিটারম্যান জর্ডে। বিজ্ঞানীরা প্রায় ১০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটির নামকরণ করেছেন ‘অন্ধকার নদী’ (দ্য ডার্ক রিভার)।
যদিও এখনও অবধি এর অস্তিত্বের ব্যাপারে নিশ্চিত প্রমাণ দিতে পারেননি তাঁরা। তবে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করেই এই সিদ্ধান্ত বিজ্ঞানীদের। কিন্তু কীভাবে তাঁরা জানতে পারলেন এই নদীর কথা? এয়ারক্রাফট থেকে রাডারের মাধ্যমে সমগ্র হিমবাহ উপত্যকার স্ক্যান চালাচ্ছিলেন তাঁরা। সেখানেই চোখে পড়ে অসঙ্গতি। স্ক্যানের ছবিতে দেখা যায় বেশ কিছু অন্ধকার অঞ্চল। যা সূচিত করে বরফের তলদেশে রয়েছে কোনো গভীর খাত।
বিগত কয়েক দশক ধরেই বিভিন্ন গবেষণা দাবি করে আসছে গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদরের তলায় রয়েছে কোনো ট্রেঞ্চ কিংবা মেগা-ক্যানিয়ন। কাজেই স্ক্যানের এই অন্ধকার অঞ্চলগুলি সেই সম্ভাবনাকেও উস্কে দিচ্ছে।
তবে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে অন্য এক পর্যবেক্ষণ। তা হল বরফের ঢাল। গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদর সমুদ্রের দিকে ক্রমশ ঢালু হয়ে গেছে। অর্থাৎ, ক্রমাগত বরফের ক্ষয় হয়েছে হিমবাহের মধ্যভাগ থেকে, যার ফলেই সমুদ্রের জলে ঝুঁকে পড়েছে হিমবাহটি। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়েই বিজ্ঞানীরা প্রসঙ্গে এনেছেন নদী প্রবাহের। দাবি করেছেন, নদী প্রবাহের ফলে অব্যহত বরফ গলনই এই ঘটনার জন্য দায়ী।
এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য একটি মডেলও প্রস্তুত করেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এখানেই শেষ নয় গবেষণার। আগামী দিনে আরও উন্নতমানের র্যা ডারের মাধ্যমে পুনরায় পরীক্ষা করতে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। আর তাতে পাওয়া যেতে পারে জলপ্রবাহের ছবিও। ডার্ক রিভারের সম্বন্ধে এখন সেই প্রমাণ পাওয়ার আশাতেই প্রহর গুনছেন ভূতাত্ত্বিকরা...
আরও পড়ুন
নদীতে ভাসছে গুলিবিদ্ধ বাবার দেহ; পাক সেনার নির্যাতনের শিকার হুমায়ূন আহমেদও
Powered by Froala Editor