কল্পবিজ্ঞানের নানা গল্পে এমন কথা শোনা গিয়েছে। অথবা পৌরাণিক কাহিনিতে। মানুষের মনের মধ্যে একটা চিন্তা আসতে না আসতেই দেখা যাচ্ছে সেটা পড়ে ফেলছেন সামনের মানুষটি। একসময় এঁদের অন্তর্যামী বলা হত। কিন্তু বাস্তবেও এমন ঘটনা সম্ভব? উত্তরটা যদি হ্যাঁ হয়, খুব অবাক হবেন নিশ্চই। এমন অবিশ্বাস্য ঘটনাই ঘটাতে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানীরা তৈরি করে ফেলেছেন এমন একটি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, যা মানুষের মস্তিষ্কের মধ্যে জন্ম নেওয়া কথাকেই পড়ে ফেলতে পারবে। আর এর পর অনুচ্চারিত চিন্তা পড়ে ফেলাটা আর অসম্ভব তো নয়ই, বরং সামান্য প্রোগ্রামিং-এর ব্যাপার।
সম্প্রতি 'নেচার নিউরোসায়েন্স' পত্রিকায় এমন অভিনব আবিষ্কারের কথা প্রকাশ পেয়েছে। গবেষক ড. জোসেফ মাকিন মনে করছেন, এখনও ইন্টেলিজেন্সটি প্রাথমিক অবস্থাতেই আছে। কয়েকটি পরিচিত বাক্যের বাইরে পড়তে পারে না এখনও। তাছাড়া প্রতিটা কথাই উচ্চারিত শব্দের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হচ্ছে। তাই অনুচ্চারিত কোনো বাক্য পড়তে কতটা ভুল হবে সে-কথা এখনও বলা যাচ্ছে না। উচ্চারিত বাক্য পড়তেই নানা ভুল থেকে যাচ্ছে। কিন্তু এই অ্যালগোরিদম উন্নত করে তুলতে পারলেই সব সম্ভব হবে।
আসলে প্রতিটা কথা চিন্তা করার সময় আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে নানা ইমপালস তৈরি হয়। সেইসব স্নায়বিক ইমপালসের মধ্যেই ভাবনার বীজ লুকিয়ে থাকে। আর তারও নিজস্ব কিছু সংকেত আছে। সেই সংকেত পড়ে ফেলতে পারে এমন একটা অ্যালগোরিদম তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রাথমিকভাবে ভুল হওয়ার সম্ভবনা থেকে যাচ্ছে প্রচুর। কিন্তু ক্রমশ আরও অনেক বাক্য ডিকোড করে তার ফলাফল ইনপুট দিতে থাকলেই যন্ত্রটি ক্রমশ উন্নত হয়ে উঠবে। আজকাল তো হাতের মোবাইলের মধ্যে থাকা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমরা মুখের কথায় নানারকম নির্দেশ দিই। কিছুদিন পর হয়তো আর সেটুকুও দরকার পড়বে না। আমাদের ইচ্ছে বুঝতে পেরে সে নিজেই কাজটি করে দেবে।
কিন্তু এমন আবিষ্কারের মূল্যবোধ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। মানুষের ভাবনাও যদি এভাবে চুরি করা যায়, তাহলে আর নিজের বলতে থাকল কী? আবার এই পদ্ধতিকেই তো মানুষের উপকারেও ব্যবহার করা যায়। শারীরিক অসুস্থতার জন্য যাঁরা বাকশক্তি হারিয়েছেন, তাঁরা হয়তো এভাবেই প্রকাশ করতে পারবেন নিজেদের।