তরল কিংবা কঠিন নয়, সুপার-আয়নিক অবস্থায় রয়েছে পৃথিবীর কেন্দ্রক

লোহা এবং নিকেল— এই দুই পদার্থ দিয়েই তৈরি পৃথিবীর কেন্দ্রক। গলিত অবস্থায় তাদের স্রোত ক্রমশ ঘূর্ণিত হয়ে চলেছে পৃথিবীর কেন্দ্রে। ছোটোবেলা থেকে এমনটাই শিখিয়েছে ভূগোল বই। কিন্তু ভূত্বকের গভীরে, পৃথিবীর একদম কেন্দ্রের পরিস্থিতি ঠিক কী— তা আজও রসহ্যময় গবেষকদের কাছে। এর আগে একাধিক গবেষণা জানিয়েছিল পৃথিবীর কেন্দ্রে (Earth's Core) রয়েছে অতি উচ্চ ঘনত্ব বিশিষ্ট লোহার গোলক। কোনো গবেষণায় উঠে এসেছে সেখানে রয়েছে তরল নিকেল ও লোহা (Iron)। এবার সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এল সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র।

তরল কিংবা কঠিন— কোনোটাই নয়। বরং, সুপার আয়নিক অবস্থায় রয়েছে পৃথিবীর কেন্দ্রক। এমনটাই জানাচ্ছে প্রথম সারির বিজ্ঞান জার্নাল ‘নেচার’-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণা। চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের একদল ভূতাত্ত্বিক ও পদার্থবিদ জড়িত ছিলেন এই গবেষণার সঙ্গে। গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পদার্থবিদ ও অধ্যাপক ডঃ ইয়ু হে। 

তাঁদের অধ্যয়নে উঠে আসছে শুধু লোহা কিংবা নিকেল নয়, একই সঙ্গে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং কার্বনের উপস্থিতিও রয়েছে পৃথিবীর কেন্দ্রকে। উচ্চ তাপ এবং চাপে এইসকল পদার্থের আয়নিত অণুগুলি ষড়ভূজাকৃতি ক্লোজ-প্যাকড গঠন তৈরি করে। পৃথিবীর কেন্দ্রে মূলত প্রবাহিত হচ্ছে এই উচ্চপ্রসারণশীল আয়নীয় পদার্থ। যাকে গবেষকরা চিহ্নিত করেছেন ‘সুপারআয়নিক’ স্টেট হিসাবে। কিন্তু কীভাবে এ-বিষয়ে নিশ্চিত হচ্ছেন গবেষকরা? 

প্রাথমিকভাবে, পৃথিবীর কেন্দ্রকে তরল এবং কঠিন লোহা রয়েছে ধরে নিয়েই গবেষণা এগিয়েছিলেন চৈনিক গবেষকরা। তারপর সিসমোলজিক্যাল পর্যবেক্ষণে ধরা পড়া ভূগর্ভস্থ তরঙ্গের সঙ্গে তুলনা করেন শব্দতরঙ্গের। তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায় মূল ছবি। তরল কিংবা কঠিন লোহার মধ্যে শব্দের যা বেগ হওয়ার কথা, এই তরঙ্গের বেগ তার থেকে অনেকটাই কম। ফলে, তরল কিংবা কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে এই তরঙ্গ প্রবাহিত হচ্ছে না তা প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে ভূমিকম্প থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে একটি সুপার-কম্পিউটার সিম্যুলেশন তৈরি করেন গবেষকরা। সেই মডেলই জানান দেয় সুপারআয়নিক অবস্থার কথা। 

আরও পড়ুন
আধুনিক মানুষের ১০ হাজার বছরের বংশতালিকা তৈরি করলেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা

তবে এখনও পৃথিবীর কেন্দ্রকের সম্পূর্ণ রহস্য সামনে আসেনি বলেই অভিমত অধ্যাপক ইয়ু হে-র। সিসমিক অ্যানাইসোট্রপি-সহ একাধিক প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা তাঁদের কাছে। তার জন্য আরও বিস্তারিত অধ্যয়ন প্রয়োজন বলেই জানাচ্ছেন তিনি। এই উত্তর পাওয়া সম্ভব হলে পৃথিবীর জন্ম এবং বিবর্তনেরও বহু রহস্যের যবনিকাপতন হবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো… 

আরও পড়ুন
বৃষ্টির সঙ্গে ঝরে পড়ে বহুমূল্য রত্ন, অদ্ভুত গ্রহের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
২ বছরের মধ্যে ইউএফও-র ছবি তুলে দেখাবেন এই বিজ্ঞানী!