মাকড়সা পছন্দ করেন, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এমনকি ঘরের কোণায় তাদের জাল দেখতে পেলেও দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলা হয় সেসব। তবে মাকড়সার এই জাল বোনার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অজানা রহস্য। এবার তারই সন্ধান দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা। মাকড়সার রেশমের কম্পাঙ্ককে তাঁরা বদলে ফেললেন যন্ত্রসঙ্গীতে।
হ্যাঁ, মাকড়সার গান। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, তেমনটাই করে দেখালেন এমআইটি’র বিজ্ঞানীরা। প্রধান গবেষক মার্কাস বুয়েলা জানাচ্ছেন মাকড়সার দৃষ্টিশক্তি অত্যন্ত ক্ষীণ। ফলত, জাল বোনার গোটা প্রক্রিয়াটার জন্যই তারা নির্ভর করে কম্পনের ওপর। শুধু তাই নয়, শিকার ধরা থেকে শুরু করে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ— সবটাই এই রেশমের কম্পনের মাধ্যমে সম্পন্ন করে মাকড়সা।
বলাই বাহুল্য, রেশমের এই কম্পন এতই সূক্ষ্ম যে তা মানুষের কানে ধরা পড়ে না। কাজেই তার অনুলিপি তৈরিতে যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া। গবেষকরা বিশেষ ধরণের লেজার আলোর মাধ্যমে প্রথমে মাকড়সার জালগুলির ২-ডি ছবি সংগ্রহ করেছিলেন। তারপর সেই রেশমের বিশ্লেষণ করা হয় কম্পিউটারে। অ্যালগরিদমের মাধ্যমে দেওয়া হয় ৩-ডি নেটওয়ার্কের আকারও।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, প্রতিটি রেশমের তন্তুর দৈর্ঘ্য এবং বুননের ধরণের মধ্যে লুকিয়ে থাকে আলাদা আলাদা সুর বা মিউজিক্যাল নোট। অ্যালগরিদমের সাহায্যে সেই সুরেরই একটি শ্রেণিবিভাগ প্রস্তুত করা হয় কম্পিউটারে। তৈরি করা হয় একটি ভার্চুয়াল সিমুলেশন যন্ত্রও। সেখানে রয়েছে প্রতিটি তন্তুর কম্পন সৃষ্টি করার বন্দোবস্ত। আর সেই পদ্ধতি অবলম্বন করলেই স্পিকারে বেজে উঠবে অভিপ্রেত মাকড়সা-সঙ্গীত।
আরও পড়ুন
কালিম্পং-এ আবিষ্কৃত নতুন ফড়িং প্রজাতি, নামকরণ বাঙালি পরিবেশবিদের নামে
ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে এই যন্ত্রের মাধ্যমে মাকড়সার গান পরিবেশনও করেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এখানেই থেমে নেই গবেষণা। পরবর্তী ধাপে এই সুরকেই হাতিয়ার করেই মাকড়সাদের সঙ্গে কথা বলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। প্রধান গবেষক মার্কাসের অভিমত, মাকড়সার এই সঙ্গীতকে উপযুক্ত যান্ত্রিক শক্তি বা কম্পনে পরিণত করতে পারলেই তার প্রত্যুত্তর দেবে মাকড়সারা। পাশাপাশি মাকড়সার এই বুনন-শিল্পের রহস্যকে কাজে লাগিয়ে পরিবর্তন আনা সম্ভব ৩-ডি প্রিন্টিংইয়েও। গবেষণাগারে এখন সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষাই চালাচ্ছেন এমআইটি’র গবেষকরা। আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির আগামী সম্মেলনেই প্রকাশ্যে আসতে চলেছে তার ফলাফল। মানুষ ব্যতীত অন্য কোনো প্রজাতির সঙ্গে যোগাযোগ সত্যিই সম্ভব কিনা— এখন তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে বিরল প্রজাতির ওরাংওটাং, দায়ী মানবসভ্যতাই