শেষ হতে চলেছে হার্ডডিস্ক, পেনড্রাইভের যুগ; তথ্য সংরক্ষণ করবে ডিএনএ

আয়তনে ঠিক যেন ছোটোখাটো একটা আলমারি কিংবা রেফ্রিজারেটর। বিশ্বের প্রথম হার্ড ড্রাইভের আয়তন ছিল এমনই। আর তার ধারণক্ষমতাও ছিল মাত্র কয়েক এমবি। তারপর প্রযুক্তির দৌলতে ক্রমশ আয়তন কমেছে তার। ছোট্ট পেনড্রাইভের মধ্যেও কয়েক টেরাবাইট তথ্য সংরক্ষণ করা যায় এখন। ভবিষ্যতে ডেটা স্টোরেজের আরও ক্ষুদ্রতম সংরক্ষণ আসবে, তা তো জানাই ছিল। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বদলে দিল স্টোরেজের (Storage Drive) সমস্ত চরিত্র, ধারণাকেই। না, আর অর্ধপরিবাহী বা ম্যাগনেটিক রিল নয়, এবার তথ্য সংরক্ষণ করা হবে জৈব পদ্ধতিতে। ডিএনএ-র (DNA) মাধ্যমে।

অনেকটা কল্পবিজ্ঞানের কাহিনির মতো শোনালেও, এমনটাই সত্যি। বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছিল ডিএনএ-র মধ্যে তথ্য সংরক্ষণের উপায়ের অনুসন্ধান। সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার গবেষণা বিভাগ ‘ইন্টেলিজেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রোজেক্টস অ্যাকটিভিটি’-র গবেষকরা খাতায়কলমে সাফল্য পেলেন এই স্টোরেজ ডিভাইস তৈরিতে। ডিএনএ-নির্মিত এই বিশেষ স্টোরেজ ডিভাইসের নামকরণ করা হয়েছে ‘মাইক্রোওয়েল’। কিন্তু কীভাবে কাজ করে এই ডিভাইস? আর তার বিশেষত্বই বা কী?

বলতে গেলে, তথ্য সংরক্ষণের গোটা প্রক্রিয়াটাই দাঁড়িয়ে রয়েছে দুটো সংখ্যার ওপর। এক এবং শূন্য। হার্ডডিস্ক হোক, কি পেনড্রাইভ বা ডিভিডি— বায়োনারি সিস্টেমের মাধ্যমেই সংরক্ষণ করা হয় ডিজিটাল তথ্যের। ডিএনএ স্টোরেজের ক্ষেত্রেও সেই একই নিয়ম প্রযোজ্য। তবে এখানে বৈদ্যুতিন মাধ্যমের পরিবর্তে তথ্য সংগ্রহের ইউনিট ডিএনএ-র অণুগুলি। অ্যাডেনিন, সাইটোসিন, গুয়ানিন এবং থিয়ামিন— ডিএনএ-র এই চারটি আণবিক উপাদানই সেখানে তথ্য সংরক্ষণের ইউনিট। তবে তাদের নাম এক্ষেত্রে বেস। গবেষকরা অ্যাডেনিন এবং সাইটোসিনকে বিবেচনা করছেন শূন্য হিসাবে। অন্য দুটি উপাদানের মান এক। এভাবেই ডিএনএ শৃঙ্খলকে কাজে লাগিয়েই তৈরি হয়েছে মাইক্রোওয়েল। 

তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, সাধারণ স্টোরেজের থেকেও প্রায় ১০০ গুণ বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারে ডিএনএ স্টোরেজ। আর সেই তথ্যে স্থায়িত্বও অনেক বেশি। সাধারণত, হার্ড ড্রাইভের ক্ষেত্রে দশ বছরের অন্তরে বদলাতে হয় ম্যাগনেটিক রিল। সেখানে ডিএনএ স্টোরেজ তথ্য ধরে রাখতে পারে কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত। শুধু তাকে নির্দিষ্ট উষ্ণতার মধ্যে রাখতে হবে। 

আরও পড়ুন
প্রজননে সক্ষম রোবটও, প্রযুক্তির সাফল্যে স্তম্ভিত গবেষকরাও

আটলান্টার গবেষকদের তৈরি ডিএনএ স্টোরেজের প্রোটোটাইপটির আয়তন মাত্র ২.৫ বর্গ সেন্টিমিটার। প্রায় ২০০ মেগাবাইট তথ্য সংরক্ষণ করতে সক্ষম সেটি। প্রোটোটাইপ বলেই সম্পূর্ণভাবে ডিএনএ শৃঙ্খলের সজ্জা লিপিবদ্ধ করেননি বিজ্ঞানীরা। সেই কাজ সম্ভব হলে তার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে কয়েক হাজার গুণ। 

আরও পড়ুন
নতুন প্রযুক্তিতে বদলে যাবে দেখার দুনিয়া, ফেসবুকে খোলা চিঠি জুকেরবার্গের

তবে মূল সমস্যা হল খরচ। এই বিশেষ প্রযুক্তিতে স্টোরেজ তৈরিতে যেমন খরচ আছে, তেমনই এই ডিভাইসে তথ্য সংরক্ষণের প্রক্রিয়াও বেশি ব্যয়সাপেক্ষ। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের পক্ষে এই ব্যয়ভার বহন করা প্রায় অসম্ভব। এখন খরচকেই আয়ত্তের মধ্যে আনার চেষ্টা করছেন গবেষকরা। তবে এটুকু নিশ্চিত, আগামীদিনে প্রযুক্তি এগোবে এই পথেই…

আরও পড়ুন
৫ মাসে ৫০০ টন প্লাস্টিক অপসারণ যমুনা নদী থেকে, সৌজন্যে ভারতীয় প্রযুক্তি

Powered by Froala Editor