কথায় আছে, মরা হাতি লাখ টাকা। আর মরা মাকড়শা? মাকড়শা কথা শুনেই গা ঘিন ঘিন করে উঠছে নাকি? অনেকেরই তেমনটা হয়। তবে মাকড়শার (Spider) মৃতদেহই এবার বদলে দেব প্রযুক্তির দুনিয়াকে। হ্যাঁ, অবাক লাগলেও সত্যি। টেক্সাসের রাইস ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়াররা এবার মৃত মাকড়শাকেই বদলে ফেললেন যন্ত্রে (Tools)!
হ্যাঁ, এ যেন সেই ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের পরীক্ষা। মৃত মাকড়শাকে মানুষের কাজ লাঘব করতে দেখলে অনেকটা জম্বি বলে মনে হওয়াই স্বাভাবিক। শুধু মনে হওয়া কেন? গবেষকরা স্বয়ং এই যন্ত্রের নাম দিয়েছেন ‘নেক্রোবোটিক্স’ (Necrobotics) বা জম্বি মাকড়শার রোবট। কিন্তু কী কাজে ব্যবহৃত হবে এই যন্ত্র?
ইলেকট্রনিক্সের দুনিয়ায় যে-সমস্ত উপাদান ব্যবহার করা হয়, অর্থাৎ মাইক্রোচিপ, রোধ, ছোটো ট্রাঞ্জিস্টার— এসব কিছুরই আকার মাত্র কয়েক মিলিমিটারের মধ্যে। তাদের নাড়াচাড়াও করতে হয় যথেষ্ট সংযতভাবে। কারণ, সামান্য ভুল হলে বা একটু বেশি চাপ পড়লেই ভেঙে যেতে পারে অর্ধপরিবাহী দিয়ে তৈরি এইসকল উপাদানগুলি। এবার এই সমস্যারই সমাধান করবে টেক্সাসের গবেষকদের তৈরি নেক্রোবোটিক্স।
নিজের দেহের প্রায় ১৭৩ গুণ ওজন বহন করতে পারে মাকড়শারা। ফলে, মাকড়শার শারীরিক পেশির দৃঢ়তা নিয়ে কোনো প্রশ্নই থাকতে পারে না। পাশাপাশি মাকড়শার রোমশ পা শিকারকে আঁকড়ে ধরতে বিশেষভাবে সক্ষম। মাকড়শার এই বৈশিষ্ট্যটিকেই ব্যবহার করেছেন গবেষকরা। মৃত মাকড়শার দেহকে কাজে লাগিয়ে বানিয়েছেন যান্ত্রিক গ্রিপার। যা সূক্ষ্ম ইলেকট্রনিক্সের উপাদান বা যন্ত্রাংশকে অনায়াসেই তুলে ফেলতে পারবে সার্কিট বোর্ড থেকে। পাশাপাশি মাকড়শার পা ধাতব যন্ত্রের মতো দৃঢ় না হওয়ায় তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ। কিন্তু কীভাবে মৃত মাকড়শার দেহকে কীভাবে কাজ করাচ্ছেন গবেষকরা?
হাইড্রোলিক্সেই এর সমাধান খুঁজেছেন গবেষকরা। হ্যাঁ, যেভাবে মোটর গাড়ির ব্রেক কাজ করে অনেকটা সেইভাবেই কাজ করবে নেক্রোবোটিক্স। আসলে মাকড়শার দেহ সম্পূর্ণ ফাঁপা। আর সেই ফাঁপা জায়গাতেই বিশেষ তরল ভরেছেন গবেষকরা। তারপর দেহের মূল অংশটির সঙ্গে যুক্ত করেছেন সিরিঞ্জ বা ইঞ্জেকশন। ইঞ্জেকশনের পিস্টনে চাপ পরিবর্তন করেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে মাকড়শার দেহের ভেতরে থাকা তরলের চাপও। আর তার দৌলতেই কখনও আঙুলের মতো ছড়িয়ে যাবে মাকড়শার পা। আবার চাপ কমলে তা সংকুচিত হয়ে যাবে মানুষের হাতের মুঠোর মতো।
গত ২৬ জুলাই ‘অ্যাডভান্সড সায়েন্স’ বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র। অতি সাধারণ এই আবিষ্কারই আগামীদিনে বদলে দিতে পারে ইলেকট্রনিক্সের জগৎকে, এমনটাই মনে করছেন গবেষকরা…
Powered by Froala Editor