আমাজনের দু’ধারে অসংখ্য প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ, ধরা পড়ল লেজার স্ক্যানে

পেরু, কলোম্বিয়া কিংবা বলিভিয়া— আমাজন অববাহিকার (Amazonian Basin) এই দেশগুলিতে পনেরো শতকের শেষভাবে উপনিবেশ স্থাপন করে স্প্যানিশরা। দীর্ঘ সময় ধরে গবেষকরা মনে করেছেন, তার আগে জনবসতি গড়ে ওঠেনি এই অঞ্চলগুলিতে। তার একটা কারণ, এই অঞ্চলগুলি প্রতিবছর শিকার হয় ভয়াবহ বন্যার। ফলে, উন্নত প্রযুক্তি ছাড়া সেখানে স্থায়ী বসতি স্থাপন প্রায় অসম্ভব। তবে সেই ভুল ভাঙে একুশ শতকের শুরুতে। বন বিশ্ববিদ্যালয়ের (Bonn University) প্রত্নতাত্ত্বিক হেইকো প্রুমারস প্রথম প্রাচীন সভ্যতার (Ancient Civilization) নিদর্শন আবিষ্কার করেন উত্তর বলিভিয়ার কাসারাবে গ্রামে। এবার লেজার স্ক্যানিং করে এমনই অসংখ্য প্রাচীন জনবসতির হদিশ পেলেন বিজ্ঞানীরা।

চলতি শতকের শুরুতে কাসারাবেতে এই সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কার হওয়ার পরেই, হেইকো তাত্ত্বিকভাবে দাবি করেছিলেন, গোটা ল্যাটিন আমেরিকায় এই ধরনের বহু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল ঔপনিবেশ শাসনের বহু কাল আগেই। আর সেই সূত্রেই শুরু হয়েছিল অনুসন্ধান। তা একেবারে বিফলে যায়নি। উত্তর বলিভিয়া ছাড়াও পেরু, কলোম্বিয়ার আমাজন অববাহিকায় বেশ কিছু জনবসতির নিদর্শন, প্রাচীন পিরামিড ও সৌধের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন ডঃ হেইকো ও তাঁর সহকর্মীরা। জৈব প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঔপনিবেশিক শাসনের বহু বহু কাল আগেই গড়ে উঠেছিল এইসব সভ্যতা। তবে গোটা অঞ্চলটি পরীক্ষা করা একপ্রকার প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁদের কাছে। নয় নয় করে হলেও যে সাড়ে চার হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল। পাশাপাশি, এক একটি জনবসতি থেকে অন্য জনবসতির দূরত্বও প্রায় কয়েকশো মাইল।

এই সমস্যার সমাধানেই প্রযুক্তির দ্বারস্থ হন গবেষকরা। এর আগে খুঁজে পাওয়া ধ্বংসাবশেষ ও প্রত্নসামগ্রীর ওপর ভিত্তি করেই পৃথক করা হয়েছল ১০০০ বর্গকিলোমিটারের মতো অঞ্চল। সেখানেই লাইট ডিটেকশন ও রেঞ্জিং প্রযুক্তির ব্যবহারে লেজারের মাধ্যমে অনুসন্ধান চালানো হয় আকাশ থেকে। বলতে গেলে গোটা অঞ্চলটির স্ক্যান করা হয়। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় লিডার স্ক্যান। আর তাতেই ধরা পড়ে অসংখ্য প্রাচীন জনবসতির ধ্বংসাবশেষের ছবি। 

এইসব শহরের গঠনও রীতিমতো অবাক করার মতোই। বন্যার সঙ্গে লড়াই করতে গোটা শহরজুড়ে খাল ও নালা তৈরি করেছিলেন সেখানকার প্রাচীন মানুষরা। একদিকে যেমন তা সেচ ও নিকাশিব্যবস্থার কাজ করত, তেমনই তা ছিল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু পরবর্তীতে কেন পরিত্যক্ত হল এই নগরগুলি? সেই রহস্য এখনও অধরা গবেষকদের কাছে। 

আরও পড়ুন
গণ-আত্মহত্যার মুখে মানব সভ্যতা!

তবে শুধু এই আবিষ্কারই নয়, লিডার স্ক্যানের ওপর ভিত্তি করে গোটা অঞ্চলটির প্রত্নতাত্ত্বিক ম্যাপও তৈরি করেছেন ডঃ হেইকো এবং তাঁর দল। আগামীদিনে যা প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা এবং অনুসন্ধানে এই নকশা ঐতিহাসিকদের বিশেষভাবে সাহায্য করবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…

আরও পড়ুন
গহীন আমাজনে প্রাচীন সভ্যতা! প্রমাণ পেলেন গবেষকরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ধ্বংসের থেকে ১০০ সেকেন্ড দূরে মানব সভ্যতা, বলছে ডুমসডে ক্লক