জেলিফিশের মধ্যেই লুকিয়ে অমরত্বের চাবিকাঠি!

‘জন্মিলে মরিতে হবে’— একথা সকলেরই জানা। কিন্তু অমরত্বের প্রত্যাশা মানুষের চিরকালের। আদিকাল থেকেই মানুষ সন্ধান করে চলেছে অমরত্বের। পুরাণে যেমন বর্ণিত আছে সমুদ্রমন্থনের কাহিনি, তেমনই অ্যালকেমিস্টরা ল্যাবরেটরিতে ‘এলিক্সির’ বা ‘অমৃত’ তৈরির প্রচেষ্টা করেছেন কিংবা বৈদ্যুৎ চালনার মাধ্যমে মৃতদেহে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা করেছেন গবেষক লুই গ্যালভানি। বিফল হয়েছে সমস্ত চেষ্টাই। অমরত্বের (Immortality) পিছনে আদৌ কি কোনো বৈজ্ঞানিক রহস্য লুকিয়ে রয়েছে? 

হ্যাঁ, এবার সেই রহস্যেরই অনুসন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। আর অমরত্বের এই চাবিকাঠি লুকিয়ে জেলিফিশের মধ্যে। জেলিফিশের চারিত্রিক বৈশিষ্ট, জীবনযাপন চিরকালই আকর্ষণ করেছে বিজ্ঞানীদের। এমনকি জেলিফিশ (Jellyfish) ও অক্টোপাসকে কেউ কেউ ‘এলিয়েন’ আখ্যাও দিয়েছেন। এবার সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাল, ইচ্ছে মতো বয়স কমিয়ে ফেলতে পারে এই অমেরুদণ্ডী জলজ প্রাণীটি। কিন্তু কীভাবে?

এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে, বুঝতে হবে বয়স বৃদ্ধির কারণ। জন্মের পর থেকে যেকোনো প্রাণীর দেহেই ক্রমশ গড়ে ওঠে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সেইসঙ্গে বিভাজিত হয় দেহ কোষও। একটা নির্দিষ্ট সময় পরে, বন্ধ হয়ে যায় কোষ বিভাজন। যেমন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে স্নায়ুকোষের বিভাজন হয় না। অন্যান্য কোষের বিভাজন হলেও, তার হার কমতে থাকে ক্রমশ। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট সময় পরে কমতে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। যার ফলস্বরূপ আমরা এগিয়ে যাই বার্ধক্যের দিকে। আর এর জন্য দায়ী মানুষের জিনোমে থাকা একটি বিশেষ উপাদান— টেলোম। যা ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে।

তবে ‘টারিটোপসিস ডরনি’ প্রজাতির জেলিফিশের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু অন্যরকম। এই প্রজাতির জেলিফিশের জিনোমে অবস্থি টেলোমের ক্ষয় হয় না। ফলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিংবা কোষ-বিভাজনেও প্রভাব পড়ে না কোনো। বার্ধক্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, রোগভোগকে উপেক্ষা করে দিব্যি বছরের পর বছর তারুণ্য উপভোগ করতে পারে এই জেলিফিশ। একমাত্র অন্য প্রাণীর আক্রমণ বা দুর্ঘটনার শিকার হলে তবেই মৃত্যু হয় তাদের। টারিটোপসিস গোত্রের আরও একটি জেলিফিস ‘টারিটোপসিস রুব্রা’-র ক্ষেত্রে আবার প্রথম যৌনমিলনের পর থেকেই ক্ষয় শুরু হয় টেলোমের। 

সম্প্রতি এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স’ বিজ্ঞান পত্রিকায়। সংশ্লিষ্ট গবেষণার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন স্পেনের ওভিয়েডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। টেলোম-রহস্যের যবনিকাপতন আগামীদিনে অমরত্বের পথ দেখাবে মানুষকে, তেমনটাই আশা করছেন তাঁরা…

Powered by Froala Editor