গ্লোবাল ওয়ার্মিং, পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন— একুশ শতকে দাঁড়িয়ে সকলেই প্রায় পরিচিত হয়ে গেছে এই শব্দবন্ধগুলির সঙ্গে। তবে উষ্ণায়নের বাইরেও নিশ্চুপে মাথা চাড়া দিচ্ছে আরও বড় বিপদসংকেত। সম্প্রতি তার ব্যাপারেই সতর্ক করলেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকদের নতুন একটি সমীক্ষা জানাল শুধু জলবায়ুই নয়, ধীরে ধীরে স্থান পরিবর্তন করছে ক্রান্তীয় বৃষ্টিরেখাও। যে পরিবর্তন অশনি সংকেত হয়ে দাঁড়াতে পারে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা, খাদ্য, বাসস্থান এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে।
ক্রান্তীয় আবহাওয়া মূলত নিরক্ষীয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের জন্য দায়ী। যার কারণ নিরক্ষীয় অঞ্চলের উচ্চ তাপমাত্রা। বিজ্ঞানীরা জানান, বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য সারা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ছে ঠিকই, তবে তাপমাত্রার বৃদ্ধি পৃথিবীর সর্বত্র এক নয়। ঠিক এভাবেই দূষণ ও বননিধনের কারণে অধিক উষ্ণ হয়ে উঠছে পার্শ্ববর্তী অক্ষাংশের অঞ্চলগুলি। এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে সেদিকেই সরে যাচ্ছে পৃথিবীর বৃষ্টিরেখা।
কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, বৃষ্টিরেখার এই পরিচলন কীভাবে প্রভাব ফেলবে আমাদের ওপরে। গবেষণার অনুযায়ী বৃষ্টিরেখার সরে যাওয়ার ফলে ক্রমশ শুষ্ক হতে শুরু করবে নিরক্ষীয় অঞ্চল। বৃষ্টিপাতের অভাবে আরও দ্রুত হারিয়ে যাবে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য। ফলে হুমকির মুখে পড়বে এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যও। শুধু তাই নয়, ভারী বৃষ্টিপাতের অভাব আঞ্চলিক চাষাবাদেও প্রভাব ফেলবে ভয়াবহ। পাশাপাশি এই অঞ্চলের মানুষদের জলের চাহিদা মেটাত বৃষ্টির জলে পুষ্ট নদীগুলি। সেখানেও ঘাটতি দেখা যাবে স্পষ্টভাবেই। অন্যদিকে বৃষ্টিরেখা সরে যাওয়ার ফলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে হঠাৎ বৃষ্টিপাত বাড়ায় দেখা যাবে বন্যা।
সর্বাধুনিক আবহাওয়া পরিবর্তনের বেশ কয়েকটি মডেলের বিশ্লেষণ করেই এমনটা জানান বিজ্ঞানীরা। এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন কলোরাডো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল। পূর্ব এবং পশ্চিম গোলার্ধের ওপর বৃষ্টিরেখার সম্ভাব্য প্রভাব আলাদা আলাদা করে অধ্যায়ন করেন তাঁরা। রিপোর্টে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পূর্বাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এবং পশ্চিম গোলার্ধের আটলান্টিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে বৃষ্টিরেখা সরে যাবে আরও দক্ষিণে। ফলে মধ্য আমেরিকা জুড়ে হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পাবে খরা।
আবার পূর্ব আফ্রিকা ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বৃষ্টিরেখা সরে যাবে উত্তরে। ফলে দক্ষিণপূর্ব আফ্রিকা এবং মাদাগাস্কারে যেমন চরমে পৌঁছাবে খরা। পরিবর্তনের কোপ থেকে বাঁচবে না ভারতও। দক্ষিণ ভারতে বৃষ্টিপাত অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বন্যা হয়ে উঠবে দৈনন্দিনের ঘটনা। হবে আরও দীর্ঘস্থায়ী।
তবে ‘হবে’ বললে ভুলই হয়। কারণ এই পরিবর্তন ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে বলেই দাবি গবেষকদের। তবে এখনও পর্যন্ত তা ধীর গতিতে এগচ্ছে ভয়াবহতারদিকে। ক্রমশ বাড়বে তার পরিবর্তনের হার। যা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হল গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনকে নিয়ন্ত্রণে আনা। চিহ্নিত করা গ্রিনহাউস নির্গমনের হটস্পটগুলিতে যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করছেন গবেষকরা। উল্লেখিত অঞ্চলগুলির উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে আনলে তবেই শান্ত করা যাবে প্রকৃতিকে। নাহলে এই বদল সাধারণ জীবনযাপনকে ব্যহত করবে ব্যাপকভাবে...
আরও পড়ুন
বিশ্বের ইতিহাসে উষ্ণতম বছর ২০২০, জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনে বাড়ছে আশঙ্কা
Powered by Froala Editor