ছবি তোলার সময় জুম করতে তো সবাই অভ্যস্ত। কতটুকু জুম করা যায়? বড়জোর ৫ একক কি ১০ একক। তার বেশি জুম হলে ছবির রেজলিউশন ঠিক থাকে না। কিন্তু যদি বলা হয় একটি ছবিকে ১০০ মিলিয়ন একক জুম করা হয়েছে। আর তাতে ছবির গুণগত মান নষ্ট তো হয়নি, বরং এভাবেই পাওয়া গেল পরমাণুর সবচেয়ে নিখুঁত ছবি। নিউ-ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষকদের এই কাজ অবাক করল সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের। আর এই কাজে বিজ্ঞানীরা সাহায্য নিয়েছেন একটি বিশেষ কম্পিউটার অ্যালগরিদমের।
ছবিটি আসলে প্রেসিউডিয়াম অর্থোস্ক্যান্ডেট নামক একটি কেলাসের আণুবীক্ষণিক ছবি। ইলেকট্রন টাইকোগ্রাফিক রি-কনস্ট্রাকশন পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে ছবিটি। এক্ষেত্রে নানা দিক থেকে ইলেকট্রন রশ্মি দিয়ে আঘাত করা হয় একটি পরমাণুকে। তারপর নির্দিষ্ট ডিটেক্টরের সাহায্যে প্রতিফলিত ইলেক্ট্রনগুলিকে চিহ্নিত করা হয়। এরপর কম্পিউটার অ্যালগরিদমের সাহায্যে সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি হয় পরমাণুর ছবি। এই প্রক্রিয়াকেই বলা হয় ইলেক্ট্রন টাইকোগ্রাফিক রি-কনস্ট্রাকশন। পরমাণুর ছবি তোলার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে তার পরেও এত নিখুঁত ছবি কোনোদিন তোলা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে যে ছবি তোলা হয়েছে তা পিকোমিটার স্তরে। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে নতুন ৩-ডি কনস্ট্রাকশন অ্যালগরিদম।
কর্নেল ইউনভার্সিটির অধ্যাপক ডেভিড মুলার রীতিমতো উত্তেজিত এই নতুন আবিষ্কারকে নিয়ে। তাঁর মতে, বিজ্ঞানীদের চোখে এতদিন একজোড়া পুরনো চশমা ছিল। এবার সেটা খুলে ফেলে নতুন চশমা পরার সময় এসেছে। এর ফলে পারমাণবিক স্তরের সমস্ত গঠন অত্যন্ত স্পষ্টভাবে দেখা সম্ভব হচ্ছে। এবং ভবিষ্যতে তা আরও উন্নত করে তোলা সম্ভব হবে। তবে একটি পরমাণুর ছবি তোলার ক্ষেত্রে এই নতুন অ্যালগরিদম অনেকটাই বেশি সময় নিচ্ছে। সেই সমস্যার সমাধানও ভবিষ্যতে সম্ভব হবে বলে মনে করছেন ডেভিড মুলার। পরমাণু গবেষণার জগতে এই প্রযুক্তি যে একটা নতুন যুগান্তর ঘটাতে চলেছে, সে-কথা বলাই বাহুল্য।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
একটা ‘তেজস্ক্রিয়’ টুথপেস্ট আর পরমাণু বোমা তৈরির কাহিনি