৫০-এর দশকে বিজ্ঞানী জর্জ সি. ডেভলের সৌজন্য পৃথিবী প্রথম পরিচিত হয়েছিল ‘রোবট’ কথাটির সঙ্গে। এমন এক যন্ত্র, যা মানুষের নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে পারে মানুষের মতোই। যত সময় গড়িয়েছে, উন্নত হয়েছে প্রযুক্তি। বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ তৈরি করে ফেলেছে স্বয়ংক্রিয় রোবটও। তবে রোবটের কি প্রাণ থাকা সম্ভব? যাকে এতদিন পর্যন্ত রূপকথা বলেই ধরে নেওয়া হত, এবার সেটাই সম্ভব করে দেখালেন বিজ্ঞানীরা। হ্যাঁ, সম্প্রতি গবেষকরা তৈরি করে ফেললেন পৃথিবীর প্রথম জীবন্ত রোবট, থুরি জেনোবট।
হাঁটাচলা, সাঁতার কাটতে পারা কিংবা কোনো ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানানোর সম্পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে এই অত্যাধুনিক জেনোবটগুলির। রয়েছে স্মৃতি ধারণ করার শক্তিও। তবে সব থেকে বড়ো কথা, কোনো ধাতব উপাদানের বদলে সেগুলি তৈরি করা হয়েছে সম্পূর্ণ জীবন্ত কোষ দিয়ে। হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও তা সত্যি। একটি ব্যাঙের প্রজাতির স্টেম কোষ দিয়েই তৈরি হয়েছে জেনোবটগুলি।
টাফটস বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জড়িত ছিলেন এই গবেষণার সঙ্গে। সম্প্রতি গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয় ‘সায়েন্স রোবটিক’ বিজ্ঞান পত্রিকায়। তাঁদের মতে জেনোবট কোনো সাধারণ প্রাণী নয়। আবার প্রথাগত রোবটের বৈশিষ্টও উপস্থিত নেই সেখানে। একইসঙ্গে জীবন্ত প্রাণী এবং যন্ত্রের সত্তা লুকিয়ে রয়েছে এর মধ্যে।
কিন্তু কীভাবে তৈরি হল এই জেনোবটগুলি? গবেষকরা জানাচ্ছেন, যেকোনো জীবেরই প্রাণের জাদুমন্ত্র লুকিয়ে থাকে ভ্রুণের মধ্যে। ধীরে ধীরে সেখান থেকেই বিকশিত হয় গোটা দেহ। একটি মাত্র কোষ বিভাজিত হয়ে বিভিন্ন ধরণের কোষ সৃষ্টি করে। তাদের প্রত্যেকের কার্যকারিতাও ভিন্ন। কেউ সাহায্য করে স্নায়বিকতন্ত্রের বিকাশে। আবার কেউ তৈরি করে পেশিকলা। এই ভ্রুণের মধ্যেই বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে বেশ কিছু বদল এনেছেন বিজ্ঞানীরা। যার ফলে বিবর্তনের স্বাভাবিক নিয়ম ভেঙে নতুনভাবে শারীরিক গঠন তৈরি করাও সম্ভব হয়েছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, ব্যাঙের ফুসফুসে উপস্থিত ‘সিলিয়া’ নামের দেহাংশটিকেই বিজ্ঞানীরা রোবটে ব্যবহার করেছেন চলাচলের অঙ্গ হিসাবে।
আরও পড়ুন
‘মানুষ’ হয়ে উঠছে রোবটও! বিশেষ অ্যালগোরিদম তৈরি বিজ্ঞানীদের
জেনোবট মূলত একটি ক্ষুদ্র মাংসপিণ্ড। আয়তন ১ মিলিমিটারেরও কম। তবে ছোটো হলেও এই রোবটগুলি এমন কিছু কাজ করতে সক্ষম, যা সাধারণত ধাতব বা প্লাস্টিকজাত পদার্থে তৈরি রোবট করতে পারে না। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি দিক হল ক্ষতপূরণ। হ্যাঁ, মাঝ বরাবর কেটে ফেললেও নতুন করে পুনর্জন্ম নিতে পারে জেনোবটের দেহাংশগুলি। তাছাড়া খাবার বা কোনো জ্বালানি ছাড়াই তারা বেঁচে থাকতে পারে টানা কয়েক সপ্তাহ।
আরও পড়ুন
মহেন্দ্রলালের বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে হিন্দি-আগ্রাসন, নির্দেশিকা ঘিরে বিতর্ক
সব মিলিয়ে জেনোবট এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। এই রোবটের হাত ধরেই প্রযুক্তির ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে বলেই অভিমত গবেষকদের। পরবর্তীকালে মানব-কোষ দিয়েও এই ধরণের স্বয়ংক্রিয় রোবট প্রস্তুতির সংকল্প নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তা চিকিৎসাবিজ্ঞান কিংবা পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠবে বলেই আশাবাদী তাঁরা…
আরও পড়ুন
মহাকাশে জন্ম নিল ব্যাকটেরিয়া, ভারতীয় বিজ্ঞানীর নামে নামকরণ
Powered by Froala Editor