সমুদ্রে গেলেই হামেশাই চোখে পড়ে গাঙচিল কিংবা মাছ শিকার করা বিভিন্ন ধরণের পাখি। পৃথিবীতে মানুষ আসার বহু আগে থেকেই রাজত্ব করে আসছে পাখিরা। তাদের বিরাজ ছিল সমুদ্রের ওপরেও। তবে আকারের দিক থেকে দানবীয় বললেও কম বলা হবে। মানুষের মতো প্রাণীকেও শিকার করা হয়তো খুব একতা দুঃসাধ্য ছিল না তাদের কাছে। সম্প্রতি এমনটাই জানালেন গবেষকরা।
আশির দশকে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আন্টার্কটিকার সিউমার দ্বীপ থেকে বেশ কিছু জীবাশ্ম সংগ্রহ করেছিলেন। যেগুলি মূলত পাখির পায়ের হাড় এবং চঞ্চুর অংশ। বার্কলে জাদুঘরে প্রায় তিন দশক থাকার পর, ২০১৫ সালে সেগুলি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক স্নাতক। পিটার ক্লয়েস নামের সেই গবেষকের দেওয়া তথ্যই নতুন ইতিহাস চেনাচ্ছে।
এতদিন মনে করা হত হয়তো ৪ কোটি বছর আগে জীবাশ্মগুলি। তবে ক্লয়েস দেখান, সেগুলির বয়স ৬ কোটি বছরেরও বেশি। গবেষণায় উঠে আসে তাদের শারীরিক গঠনও ছিল বেশ অদ্ভুত। চঞ্চুতে ছিল ধারালো দাঁতের উপস্থিতি। তবে দাঁত বলতে আমাদের মতো দাঁত নয়। চঞ্চুরই বর্ধিত অংশ। সিউডোটিথ নামে এই করাতের মতো অংশগুলিই তাদের সাহায্য করত শিকার করতে। দৈর্ঘে ছিল প্রায় এক ইঞ্চি। সমুদ্রে ডুব দিয়ে অনায়াসেই তারা তুলে আনত বৃহদাকার মাছ কিংবা স্কুইড। ডানা প্রসারিত করলে পাখিগুলির সর্বোচ্চ আয়তন হত ২১ ফুটের কাছাকাছি। শুধু মাথাই হত ২ ফুট দৈর্ঘের। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহত্তম পাখি সম্ভবত এরাই...
ক্লয়েসের অভিমত, ডাইনোসরেরা পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পর সেনোজোয়িক যুগে এই দৈত্যাকার পাখিগুলির উত্থান হয়েছিল। দক্ষিণ মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের রাজত্ব বজায় ছিল দীর্ঘ ৫ কোটি বছরের কাছাকাছি। তবে বরফযুগের আগেই হয়তো পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় তারা। প্যালাগোর্নিথিড নামের এই পাখিগুলির শেষ জীবাশ্ম পাওয়া যায় ২.৫ কোটি বছর আগের। আজও এদের অস্তিত্ব থাকলে হয়তো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারত না মানব সভ্যতা। শিকার হতে হত পক্ষীদের কাছে...
Powered by Froala Editor