মানবদেহ তো বটেই পৃথিবীর প্রায় সমস্ত প্রাণী এবং উদ্ভিদের দেহেই রয়েছে এক জৈবিক ছন্দ। আর সেই ছন্দ বা ঘড়ির দৌলতেই সমস্ত শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ আবর্তিত হয় ২৪ ঘণ্টা সময়ের নিরিখে। যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘সারকেডিয়ান ক্লক’। তবে ছত্রাক এবং সালোকসংশ্লেষ করতে পারা বিশেষ কয়েকটি ব্যাকটেরিয়া ছাড়া অণুজীবের মধ্যে এই ঘটনা লক্ষ্য করা যায় না। এবার ভেঙে গেল সেই প্রথাগত ধারণাই। বিজ্ঞানী প্রথম এমন কোনো ব্যাকটেরিয়া খুঁজে পেলেন, যা সালোকসংশ্লেষক্ষম না হলেও দেহে অস্তিত্ব রয়েছে ‘সারকেডিয়ান ক্লক’-এর।
সম্প্রতি এই উল্লেখযোগ্য গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে। গবেষণায় যুক্ত ছিলেন মিউনিখের লুডউইগ ম্যাক্সিমিলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রোনোবায়োলজিস্ট মার্থা মেরো। দীর্ঘ সময় ধরেই ব্যাকটেরিয়ার জৈবিক ঘড়ির ব্যাপার ধন্ধে ছিলেন বিজ্ঞানীরা। এবার যবনিকা পতন হল তার। ব্যাসিলাস সাবটিলিস নামের এই ছোট্ট অণুজীব ব্যাকটেরিয়াটির বাসস্থান মূলত মাটি। তাছাড়াও মানুষ-সহ বিভিন্ন প্রাণীদের খাদ্যনালীতে দেখা যায় এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি।
গবেষক মার্থা দেখান, এই অণুজীবের মধ্যে এক বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতিই তাকে জানিয়ে দেয় সময়। মূলত তা ‘ওয়াইটিভি-এ’ নামের একটি জিন। যার মধ্যে রয়েছে নীল আলোর ফটোরিসেপটর। এই রিসেপটারের ওপর নির্ভর করেই আলো এবং অন্ধকারের উপস্থিতি টের পায় সাবটিলিস ব্যাকটেরিয়া। আবর্তিত হয় যথাক্রমে ১২ ঘণ্টার ‘কর্ম’ ও ‘বিশ্রাম’ চক্র।
তবে এখানেই শেষ নয়। এই ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণ অন্ধকারে কেবলমাত্র তাপমাত্রাকে নির্ণয় করেও ‘দৈহিক ঘড়ি’ চালাতে সক্ষম। এই ব্যাকটেরিয়ার দেহে উপস্থিত একাধিক দোলক উষ্ণতার তারতম্যকে বিচার করে দিন-রাত, গ্রীষ্ম-শীতের ফারাক বুঝিয়ে দেয় এটিকে।
তবে এই আবিষ্কার ব্যাকটেরিওলজিতে বিপ্লব আনতে চলেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ একদিকে এই আবিষ্কার অন্যান্য সালোকসংশ্লেষে সক্ষম ব্যাকটেরিয়াদের ক্ষেত্রেও জৈবিক ঘড়ির উপস্থিতির সম্ভাবনাকে উস্কে দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়ার দেহে ২৪ ঘণ্টার সারকেডিয়ান ক্লকের উপস্থিতির প্রমাণ মিললে ভবিষ্যতে চিকিৎসাবিজ্ঞান, কৃষি, শিল্পে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতাকে বাড়িয়ে নেওয়া যাবে। সেইসঙ্গে ব্যাকটেরিয়া-ঘটিত রোগগুলির চিকিৎসা আরও সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে করা সম্ভব হবে বলেই আশাবাদী বিজ্ঞানীরা...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পদার্থের নতুন দশা আবিষ্কার জার্মানির পরীক্ষাগারে, অবাক বিজ্ঞানীরা