পদ্মা খেয়ে নিয়েছে সব, দুঃস্থ শিশুদের আলো দিচ্ছে কলেজপড়ুয়ার পাঠশালা

বিশ্বের সমস্ত দেশেই বড়লোক ও গরীবদের মধ্যে বন্টনের তফাত অনেকখানি। এই তফাতের প্রভাব পড়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অনান্য সুযোগ-সুবিধের ক্ষেত্রেও। শহরের নামিদামি স্কুলে লেখাপড়ার সুযোগ পায় মুষ্টিমেয় কিছু ধনী পরিবারের সন্তান। বাকিদের স্বপ্ন তাহলে কি পিছিয়ে যাবে?

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের শিশুদের পড়াশুনা কিন্তু থমকে যায়নি। কারণ টিউশনির টাকা বাঁচিয়ে মীর নাদিম হোসেনের মতো উদ্যমী কলেজ শিক্ষার্থী এবং তাঁর সহপাঠীরা গড়ে তুলেছেন ‘পদ্মাপারের পাঠশালা’। সেখানকার ৫৪ জন শিশুকে তারা কিনে দিচ্ছেন বই, খাতা, কলম। মূলত অসহায় দরিদ্র ও সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাই বিনা খরচে লেখাপড়া করার সুযোগ পায় এখানে।

৩০ বছর ধরে পদ্মার করাল গ্রাসে হরিরামপুর উপজেলার মানচিত্র ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে আসছে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ জনপদ পদ্মায় বুকের ভিতর হারিয়ে গেছে। হাজারো পরিবার তাদের পৈতৃক ভিটেমাটি হারিয়ে রাস্তার ধারে, বস্তিতে অথবা অন্যের জমিতে। কিছু পরিবার তাদের শিশুদের টাকা পয়সা খরচ করে দূরের স্কুলে পাঠাতে সক্ষম হলেও সবার পক্ষে তা সম্ভবও নয়।

এমন পরিস্থিতিতেই মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নাদিম এগিয়ে এসেছিলেন তাঁর সামর্থ্যটুকু নিয়ে। বাড়িতে মা, বাবা ও এক বোন। বাবা একটি কলেজে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। অনার্স পড়ার সময় থেকে টিউশনি শুরু করেন নাদিম। তখনই এই দুঃস্থ শিশুদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন।

চলতি বছরের মার্চ থেকে নাদিম চালু করেন পাঠশালার কার্যক্রম। হরিরামপুরের আন্ধারমানিক গ্রামে নিজেই ৫০০ টাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে চালু করেন। বর্তমানে দুই শিফটে চুয়ান্নটি শিশু পড়াশোনা করছে। গ্রামে ঘুরে ঘুরে শিশুদের নিয়ে আসেন নাদিম। দুই ব্যবসায়ী পাঠশালার জন্য ৫ জোড়া বেঞ্চ দিয়ে সহায়তা করেছেন। সহপাঠী রবীন্দ্র এবং নিশা হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন নিজেদের সাধ্যমতো।

নাদিম জানান, শিশুদের পড়াশোনা চালাতে সরকারি এবং বেসরকারি সাহায্যের প্রয়োজন। হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইলিয়াস মেহেদীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন নাদিম। মেহেদীও চেষ্টা করছেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্য করতে। আগামী দিনে, নাদিমের মত ছেলে জন্মাক ঘরে ঘরে। কারণ শিক্ষাই পারে একমাত্র মানুষকে মানুষের সাথে মিলিয়ে দিতে।