সৌরজগতের গ্রহদের মধ্যে সবচেয়ে রূপবান হিসাবেই ধরা হয় শনিকে। আর তার কারণ সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ হিসাবে শনির চারিদিকে অপার্থিব বলয়ের উপস্থিতি। তবে দুঃখের বিষয় ক্রমশ রূপ হারাচ্ছে সৌরজগতের ষষ্ঠ প্রতিনিধি শনি (Saturn)। ধীরে ধীরে নিজেই গ্রাস করছে নিজের বলয়কে। হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এল নাসার ক্যাসিনি মিশনের রিপোর্টে।
মূলত, শনি গ্রহের এই বলয়গ্রাসের পিছনে দায়ী ‘রিং রেইন’ (Ring Rein) নামের একটি ঘটনা। শুক্র, পৃথিবী কিংবা মঙ্গলের মতো কঠিন ভূপৃষ্ঠ নেই শনিতে। শনি গ্রহ আদতে একটি দৈত্যাকার গ্যাসের পিণ্ড। হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মিথেন, অ্যামোনিয়া ও অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাসের সংমিশ্রণে তৈরি এই গ্রহ। শনির অভিকর্ষ বলের প্রভাবে যত পৃষ্ঠের কাছাকাছি চলে আসছে শনির বলয়গুলি, এইসকল গ্যাসের রাসায়নিক প্রভাবেই ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত এবং বাষ্পীভূত হচ্ছে সেগুলি। তবে সম্পূর্ণভাবে ক্ষয়ীভূত হতে এখনও ১০-৩০ কোটি বছর সময় লাগবে বলেই অনুমান গবেষকদের। ফলে, শনির বলয়রহস্য সমাধানের জন্য এখনও যথেষ্ট সময় রয়েছে মানুষের হাতে। এমনটাই জানাচ্ছে নাসার রিপোর্ট।
প্রাথমিকভাবে মনে করা হত, আজ থেকে প্রায় ৪৬০ কোটি বছর আগে শনির জন্মের সময়ই তৈরি হয় এই বলয়গুলি। তবে ১৯৮০-র দশকে সেই ধারণা ভেঙে যায় নাসারই ভয়েজার মিশনে। পরীক্ষা করে দেখা যায় সেগুলির বয়স সাকুল্যে ১-১০ কোটি বছর। কিন্তু মাঝবয়সে এসে হঠাৎ এই বলয়গুলি কীভাবে পেল শনি? এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর আজও জানা নেই বিজ্ঞানীদের কাছে। তবে মনে করা হয়, শনির বিভিন্ন উপগ্রহের ধ্বংসাবশেষ এবং মহাজাগতিক পদার্থ আকর্ষণ বলের কারণে শনির চারিদিকে প্রদক্ষিণ করতে করতে এই বলয় তৈরি করেছে। তবে পৃথক পৃথকভাবে ৮টি বলয় তৈরি কারণও বেশ রহস্যময়। শনির বলয়গ্রাসের আগে বিস্তারিত অধ্যয়ন সেই রহস্যের সমাধান এনে দেবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা…
Powered by Froala Editor