সদ্য স্বাধীন কলকাতার সাহেবপাড়ার জীবন। তার ভিতরের নানা মানবিক টানাপোড়েন নিয়েই লেখা ‘চৌরঙ্গী’। এইবছরই সেই উপন্যাস পা দিল ৬০ বছরে। আর এবছরই সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পাচ্ছেন লেখক শংকর। আজ সাহিত্য অ্যাকাডেমির এগজিকিউটিইভ কাউন্সিলের মিটিং-এই তাঁর নাম ঘোষণা করা হবে। শংকরের সাহিত্যজীবনের এই সম্মানে খুশি বাংলা সাহিত্যিকদের এক বড়ো অংশ।
ফেলুদাকে এক উত্তরভারতীয় হোটেলব্যবসায়ী জানিয়েছিলেন, বাংলা সাহিত্যে তাঁর প্রিয় লেখক শংকর। সত্যিই তিনি বাংলা ভাষায় গল্প-উপন্যাস লিখেও হয়ে উঠেছিলেন জাতীয়। কিন্তু সাহিত্যজীবনের শুরুটা সহজ ছিল না। ১৯৩৩ সালে বনগাঁয় জন্ম মণিশংকর মুখোপাধ্যায়ের। এরপর সপরিবারে চলে আসেন হাওড়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি আক্রমণের ভয়ে পরিবারের সবাই বনগাঁ ফিরে গেলেও শংকর তাঁর বাবার সঙ্গে থেকে গেলেন। কিন্তু স্বাধীনতার বছরেই পিতৃবিয়োগ হল মণিশংকরের। সম্বলহীন কিশোর জীবিকার প্রয়োজনে অফিসের কেরানির চাকরি থেকে গৃহ পরিচারকের কাজ এমনকি হকারিও করেছেন।
এই সময়েই তৎকালীন রিপন কলেজে পড়ার সময় তিনি কাজ করতেন হাইকোর্টের শেষ ব্রিটিশ ব্যারিস্টার ফ্রেডরিক বারওয়েলের কাছে। তাঁকে নিয়েই লিখে ফেললেন আস্ত একটি উপন্যাস, ‘কত অজানারে’। সাহিত্যের জগতে সেই প্রথম পা রাখা। এরপর ‘চৌরঙ্গী’ উপন্যাস তো তাঁকে সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যিকের সম্মানও এনে দিয়েছিল। তাঁর চারটি উপন্যাস নিয়ে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র। এর মধ্যে ‘সীমাবদ্ধ’ ও ‘জন অরণ্য’ পরিচালনা করেছেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়। ‘কত অজানারে’ নিয়ে সিনেমা তৈরির কথা ভেবেছিলেন ঋত্বিক ঘটক।
সাহিত্যিক শংকর নিজের লেখার ধরণকেও ভেঙেছেন একাধিকবার। বিবেকানন্দের জীবন নিয়ে লেখা বইগুলি কখনও বেস্ট-সেলার তালিকার বাইরে যায়নি। ৮৭ বছর বয়সে এসেও অক্লান্ত তাঁর কলম। ২০১৪ সালে লেখা ‘একা একা একাশি’ উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পাচ্ছেন শংকর। অবশ্য অনেকেই মনে করছেন, শংকরের জীবনে এই সম্মান আরও আগে আসতে পারত। ‘চৌরঙ্গী’-র মতো উপন্যাস লেখার পরেও মূল ধারার সাহিত্যিকদের মধ্যে কৌলিন্য পাননি শংকর। আজ এই ঘোষণায় তারই শাপমুক্তি ঘটবে বলে মনে করছেন অনেকে।
আরও পড়ুন
তিনটি বইয়ের প্রতিটি শব্দেরই আদ্যক্ষর ‘ক’, অভিনব সাহিত্য রচনা বাঙালি লেখকের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রথম ভারতীয় সাহিত্যিক হিসাবে জাঁ-জ্যাকস রুশো ফেলোশিপ পেলেন বাংলার মনোরঞ্জন ব্যাপারী