সঞ্জয় মঞ্জরেকার নামকরা ধারাভাষ্যকার, এককালীন ভারতীয় টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্যও। কিন্তু তার থেকেও তিনি বেশি পরিচিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতার জন্য। ইডেন গার্ডেন্সে সদ্য সমাপ্ত গোলাপি বল টেস্টের তৃতীয় দিনে হর্ষ ভোগলের সঙ্গে কমেন্ট্রি বক্সে নতুন বিতর্ক তৈরি করেন সঞ্জয়। আর এই বিতর্কের সূত্রপাত গোলাপি বল ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে।
বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানেই গুটিয়ে যায়। দ্বিতীয় দিনের শেষেও ১৫২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে। তৃতীয় দিন খেলা শুরুর মাত্র ৫০ মিনিটের মধ্যেই উমেশ যাদবের দুরন্ত বোলিং-এ অল আউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। প্রাক্তন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াধ উরুর চোটের জন্য আর মাঠে নামেননি।
ধারাভাষ্য চলাকালীন হর্ষ ভোগলে বলেন, বলটি ঠিক করে দেখতে না পাওয়া এই টেস্টের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে, এবং টেস্টের শেষে এর একটা ‘পোস্ট মর্টেম’ হওয়া উচিত। তাতে মঞ্জরেকার বলেন, বলটির গঠনের (টেক্সচার) সমস্যা, দেখতে পাওয়াটা নয়। হর্ষ বলেন, কারণ খতিয়ে দেখার জন্য দুই দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলা উচিত। মঞ্জরেকার তাতে ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে উত্তর দেন। তাঁর জবাব – ‘আপনারই জিজ্ঞেস করার দরকার হর্ষ। আমরা, যারা খেলেছি তাদের জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। আমাদের যথেষ্ট ধারণা আছে মাঠের ভেতর কী চলছে। ১০-১৫ বছর ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলে একটা অভিজ্ঞতা তৈরি হয়েই যায়।’ এতেও অপমানিত বোধ না করে হর্ষ জবাব দেন, ‘ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা কি শেখা বন্ধ করতে বলে? তাহলে তো দিনে-রাতের ক্রিকেট এর আবিষ্কারই হত না!’
এরই পরে ক্ষোভে ও বিরক্তিতে ফেটে পড়ে টুইটার। অনেকে বলেন, সঞ্জয়ের উচিত হর্ষের কাছে ক্ষমা চাওয়া। হর্ষের মতন অভিজ্ঞ, জ্ঞানী ও বিনয়ী ধারাভাষ্যকার বিরল এবং মঞ্জরেকারের এমন ব্যবহার করা একেবারেই উচিত হয়নি। বিখ্যাত কুইজমাস্টার এবং ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ জয় ভট্টাচার্য বলেন ‘অভব্য এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার ছিল এটা। সহ-ধারাভাষ্যকারের সঙ্গে সভ্যতা বজায় রাখতে কি খুব খরচ হয়?’
আরও অনেকে তাদের বক্তব্য রাখেন:
এর আগেও একাধিকবার বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন সঞ্জয় মঞ্জরেকর। সবচেয়ে বেশি কথা ওঠে এ-বছরের জুলাই মাসে, ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলাকালীন, যখন মঞ্জরেকার মহেন্দ্র সিংহ ধোনির স্পিন খেলা নিয়ে সমালোচনা করেন। ধোনির ভক্তরা ছেড়ে কথা বলেননি। বলাই বাহুল্য, সঞ্জয় তা পাত্তা দেননি। ওই সময়ই রবীন্দ্র জাদেজা কে ‘বিটস এন্ড পিসেস’ (জোড়াতালি দেওয়া) ক্রিকেটার বলেন। জবাবে রাজপুত জাদেজা টুইটারেই একহাত নেন মঞ্জেরেকারকে। ‘আপনার থেকে অনেক বেশি খেলেছি এবং এখনো খেলছি। যারা নিজের জায়গা করে নিয়েছেন তাদের যোগ্য সম্মান দিতে শিখুন। আপনার 'ভার্বাল ডায়ারিয়া' অনেক শুনেছি।’
তার আগে মেলবোর্নে আয়োজিত ২০১৮-এর ডিসেম্বরের বক্সিং ডে টেস্টে বিরাট কোহলির ৪৪৩/৭-এ ডিক্লারেশন নিয়ে সমালোচনা করেন সঞ্জয়। ভারতীয় পেসারদের আগুন ঝরানো বোলিং-এর ফলে ১৫১ রানে মুখ থুবড়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া এবং শেষে ভারত জেতে ১৩৭ রানে।
দশম আইপিএল চলাকালীন ২০১৭-র এপ্রিল মাসে কায়রন পোলার্ডকে ‘উইদাউট ব্রেন’ বলে অভিযুক্ত হন মঞ্জরেকার। পরে টুইটারে নিজের সাফাই দেন সঞ্জয়। বলেন, ‘উইদাউট রেঞ্জ বলেছিলাম। কোনোরকম অপমান করতে চাইনি।’
শুধুমাত্র ক্রিকেট নয়, নিজের মন্তব্য নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন সানিয়া মির্জার সঙ্গেও। ২০১৬-র অক্টোবরে সানিয়া টানা ৮৩ সপ্তাহ বিশ্বের ১ নম্বর প্লেয়ার থাকার নজির নিয়ে টুইট করেন। ভুল ধরাতে যান মঞ্জরেকার, বলেন ‘আপনি ডাবলসের ১ নম্বর বোঝাতে চাইছেন তো?’ সেই নিয়েও টুইটার জনতার রোষের মুখে পড়েন সঞ্জয়।
এরকম বহু বিতর্কিত মন্তব্য করে ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছেন সঞ্জয় মঞ্জরেকার। তাকে সরানোর জন্য স্টার ক্রিকেটকে চাঁদা তুলে টাকাও দিতে রাজি অনেকেই। আইআইএম আহমেদাবাদ থেকে পিজিডিএম করা, ইঞ্জিনিয়ার থেকে ধারাভাষ্যকার হওয়া মিষ্টভাষী ভোগলে ১৯৯২ সালে ধারাভাষ্য শুরু করেন। অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন ও বিবিসির মতন আন্তর্জাতিক মানের জায়গায় তাঁকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁর পরিশীলিত ও উচ্চমানের ধারাভাষ্যের জন্য। খুবই জনপ্রিয় ভোগলের এরকম অপমান মানতে পারছেন না জনসাধারণ। এমন অবস্থায় স্টার ক্রিকেট বা বিসিসিআই কোনো পদক্ষেপ নেয় কিনা, বা সঞ্জয় নিজেই হর্ষের কাছে ক্ষমা চান কিনা সেটাই দেখার।