ওঁদের কোনো বাড়ি নেই। তবুও নিজেদের আশ্রয়হীন বলতে চান না তাঁরা। কারণ, আশ্রয় বলতে রয়েছে বিরাট সমুদ্রটাই। কানাডার সান ফ্রান্সিসকো উপসাগরে ঘুরে বেড়ান এইসব যাযাবর নৌকাচালকরা। অনেক সময় সমুদ্রের বুকে আকাশের নিচেই রাত কেটে যায় তাঁদের। আর ঝড়বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় তো বন্দরের কাছে ছাউনি আছেই। তার নিচে নৌকা ভিড়িয়ে দিব্যি কেটে যায়। কিন্তু এবার যেন সেই ছবিটা বদলে যেতে চলেছে। হারিয়ে যেতে চলেছেন এই যাযাবর নৌকাচালকরাও (Bohemian Boat Dwellers)। মেরিন কাউন্টি কর্তৃপক্ষের নির্দেশকে ঘিরে এমনই আশঙ্কার মেঘ দেখছেন তাঁরা।
বিষয়টি এখন শুধুমাত্র আশঙ্কার স্তরে রয়েছে মনে করলেও অবশ্য ভুল হবে। ইতিমধ্যে অন্তত ১০ জন অ্যাঙ্কর-আউটস বা যাযাবর নৌকাচালকের নৌকা কেড়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এখন তাঁরা সত্যিই আশ্রয়হীন। সমুদ্রের ধারেই তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের যুক্তি, বন্দরে আইনশৃঙ্খলা ফেরাতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অ্যাঙ্কর-আউটসদের কারোরই কোনো স্বীকৃতি নেই, এ-কথা সত্যি। কিন্তু তাঁদের এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সেই ৫০-এর দশকে যখন কানাডার উত্তর অঞ্চলে সোনার খোঁজে অভিযান শুরু হয়, তখন থেকেই এই রীতি চলে আসছে। প্রথমে সোনা অনুসন্ধানকারীরা নৌকা নিয়ে সমুদ্রের বুকে রাত কাটাতে শুরু করেন। ক্রমশ তাঁদের সঙ্গে এসে জোটেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সমস্ত যাযাবর শিল্পী-সাহিত্যিকরা। অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বিট জেনারেশন সাহিত্যিকদের অনেকেই দীর্ঘদিন কাটিয়ে গিয়েছেন সসালিটো শহরের সমুদ্র উপকূলে। হিপিদেরও একটা বড়ো আস্তানা হয়ে উঠেছিল এই সসালিটো বন্দর।
এরপর ধীরে ধীরে বন্দরের পরিকাঠামো বেড়েছে। এখন বিলাসবহুল নৌকা ঘুরে বেড়ায় সমুদ্রে। সেখানে যাত্রীদেরও রাত্রিযাপনের সুযোগ আছে। অ্যাঙ্কর-আউটসরা একেবারেই প্রান্তিক হয়ে পড়েছেন। এক সময় ২০০ জনেরও বেশি অ্যাঙ্কর-আউটসের দেখা মিলত সান ফ্রান্সিসকোর সমুদ্রে। এখন সংখ্যাটা ৫০-এর আশেপাশে নেমে এসেছে। তবে এরপরেও দিব্যি চলে যাচ্ছিল। আর না চলেই বা উপায় কী? কানাডায় এই মুহূর্তে একটি থাকার উপযুক্ত একটি বাড়ি কিনতেই খরচ পড়ে অন্তত ১ কোটি ৮০ লক্ষ ডলার। হ্যাঁ, এমনটাই অবস্থা। আর সেখানে এই দরিদ্র নৌকাচালকদের পক্ষে অন্য আশ্রয় খোঁজার তাই কোনো সুযোগই নেই। এই অবস্থায় তাই জল কামড়ে পড়ে থাকাই বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। কিন্তু প্রশাসনের সঙ্গে এই অসম প্রতিযোগিতায় কতদিনই বা টিকে থাকতে পারবেন তাঁরা?
আরও পড়ুন
সাহারার কোপে ঘরছাড়া, ‘অন্য’ পরিবেশ-উদ্বাস্তুদের গল্প
তথ্যসূত্রঃ The anchor-outs: San Francisco’s bohemian boat dwellers fight for their way of life, Erin McCormick, The Guardian
আরও পড়ুন
কাশ্মীরে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩ লক্ষ বৃক্ষচ্ছেদন, ঘর হারাবেন ৩৭০০ পরিবার
Powered by Froala Editor