দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থদের আত্মকথন, লুকিয়ে-থাকা আখ্যান সংরক্ষণে উদ্যোগী শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়

কথায় আছে, প্রকাশ পাওয়ার আগে পর্যন্তই কোনো গ্রন্থ লেখকের থাকে। তারপর তা হয়ে যায় পাঠকের। পাঠক নিজের মতো করেই সেই মুদ্রণের মধ্যে গড়ে নেয় তাঁর নিজস্ব জগত। একই বইয়ের আলাদা আলাদা সংস্করণের ক্ষেত্রে দু’মলাটের মধ্যেকার শব্দবিন্যাস, কথার বুনন কিংবা বিষয়— সেসব একই থাকে। শুধু বদলে যায় পিছনের গল্পটা। কোথাও লেখা থাকে পাঠকের ছোট্ট টীকাভাষ্য, কোথাও আবার উপহারের শুভেচ্ছাবার্তা। সেও তো এক ইতিহাসই বটে। দুর্মূল্য বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সেইসব অজানা আখ্যানদেরই এবার একজায়গায় জড়ো করছেন প্রকাশক, সম্পাদক, সমালোচক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়।

সে যেন এক রূপকথার লাইব্রেরি। কী নেই সেখানে? ফরাসি সাহিত্যিক কামুর কিংবদন্তি প্রবন্ধগ্রন্থ ‘মিথ অফ সিসিফাস’-এর প্রথম সংস্করণ থেকে শুরু করে বিশ্বভারতী থেকে প্রকাশিত রক্তকরবীর বিরল ইংরাজি অনুবাদ। রয়েছে খ্যাতনামা সমাজবিদ ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সংগ্রহের বহু গ্রন্থ। আর সেসবই অত্যন্ত যত্নে লালন করে চলেছেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। সব মিলিয়ে তাঁর সংগ্রহে দুষ্প্রাপ্য বই ও পত্রিকার সংখ্যা ৪০ হাজারেরও বেশি। তাঁর মধ্যে বেশ কিছু বই তিনি পেয়েছেন তাঁর পূর্বসূরিদের থেকে। আবার কলেজস্ট্রিটে পুরনো বই বাজারের স্তূপ থেকেও তিনি খুঁজে এনেছেন অমূল্যরতন। তবে এইসব গ্রন্থের ব্যপ্তি যাতে ছুঁয়ে যায় বৃহত্তর পাঠকমহলের অনুসন্ধিৎসাকে, তার জন্যই এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এই আস্ত গ্রন্থাগারের দরজা খুলে দিচ্ছেন সাধারণের জন্য। 

তবে আর পাঁচটা সাধারণ লাইব্রেরির থেকে এই গ্রন্থাগার হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন গোত্রের। কারণ, শুধু দুষ্প্রাপ্য বই-ই নয়, বরং ঠিক যেন প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতোই তাদের পিছনে লুকিয়ে থাকা গল্পগুলোকেও সংরক্ষণ করছেন শমীকবাবু। আর তা শুনতে পাওয়া যাবে তাঁরই কণ্ঠস্বরে। এ যেন ইতিহাস ও পাঠকের মধ্যে এক সেতু নির্মাণ কর্মসূচি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মারফতে সেই সংরক্ষণের কর্মকাণ্ডই চলছে বর্তমানে। গোটা সংগ্রহের ডিজিটাল ক্যাটালগিং নির্মাণ এবং এই শ্রুতি-আখ্যান সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে ‘বই বৈভব ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংস্থা। একইভাবে চলছে স্থায়ী কোনো গ্রন্থাগার নির্মাণের জন্য অর্থসংগ্রহও। 

তবে গোটাটাই বেশ দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এখনও বছর দেড়েক সময় লেগে যাবে গোটা পরিকল্পনাটা গুছিয়ে উঠতে। তা কেবলমাত্র সময়ের অপেক্ষা। তারপরই খুলে যাবে এক রূপকথার দুনিয়া। যার মধ্যে দিয়ে পাঠক পৌঁছে যেতে পারবে বইয়ের ইতিহাস ও ‘ব্যক্তিগত’ আখ্যানের কাছে। ছুঁয়ে দেখতে পারবে তাঁর যাত্রাপথ, অতীত। সময়ভ্রমণের সেই অপেক্ষাতেই প্রহর গুনছে বাংলার পাঠকমহল…

আরও পড়ুন
গোটা গ্রামই লাইব্রেরি, ব্যতিক্রমী পথচলা শুরু দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বড়বেড়িয়ায়

তথ্যসূত্রঃ
বইয়ের বিপুল বৈভব এবং অতীতের সঙ্গে অনন্ত ভবিষ্যতের আত্মকথন, অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়, আনন্দবাজার পত্রিকা

আরও পড়ুন
পড়াশোনার সুযোগ পাননি নিজে, পাটুলিতে স্ট্রিট লাইব্রেরি গড়ে ‘স্বপ্নপূরণ’ দোকানির

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অষ্টাদশীর স্বপ্নপূরণ, বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে লাইব্রেরি তৈরি রাহিলার

Latest News See More