“অনেকক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটে। পুজোর সময় মধ্যবিত্ত পরিবারে বাচ্চাদের জামাকাপড় দিতে গিয়ে বাবা-মা নিজেদের জন্যই কোনো পোশাক কেনেন না। এই চিন্তাভাবনা থেকেই আমাদের উদ্যোগ।”
বলছিলেন মনস্বিতা দেব। মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন অন্নদামঙ্গলের সেই প্রবাদপ্রতিম পঙক্তিটির কথা, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। মাস কয়েক আগের কথা। করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের প্রকোপ ঠেকাতে ঘোষিত হয়েছিল লকডাউন। সে-সময়ই হাওড়ার সালকিয়ার মনস্বিতা এবং তাঁর দুই বন্ধু মধুশ্রী সাধুখাঁ ও তথাগত পাল যৌথ উদ্যোগে খুলে ফেলেছিলেন এক অভিনব ১ টাকার বাজার। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন দরিদ্রদের। এবার পুজোর মরশুমে আরও একবার অভিনব উদ্যোগ নিয়ে ফিরল সেই বাজার।
রাজ্যে লকডাউনের কঠোরতা খানিকটা শিথিল হলেও, ভাগ্যের চাকা গড়ায়নি অর্থনৈতিক পিরামিডের নিচের তলার মানুষদের। ফলত, দোরগোড়ায় উৎসব এসে হাজির হলেও, এখনও খুব একটা রঙিন হয়ে ওঠেনি তাঁদের দিনগুলো। সেই মানুষগুলোর হাতেই ন্যূনতম মূল্যে নতুন পোশাক তুলে দেবে ১ টাকার বাজার।
তথাগত জানালেন, “সব মিলিয়ে ১০০ জন পুরুষ পাঞ্জাবি ও ফতুয়া এবং ১০০ জন মহিলাকে আমরা শাড়ি দিচ্ছি। এবং তাঁরা সেটা ১ টাকার বিনিময়েই আমাদের থেকে কিনবেন। আমরা একেবারেই বিনামূল্যে এই পরিষেবা দিচ্ছি না।” আসলে লকডাউনে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত, খেটে খাওয়া মানুষদের আত্মসম্মানে যাতে না বাঁধে, সে কথা ভেবেই এমন চিন্তাভাবনা হাওড়ার তরুণ-তরুণীদের।
আরও পড়ুন
লকডাউনে উপার্জনহীনদের জন্য ১ টাকার বাজার সালকিয়ায়
জানা গেল, আগামী ২ ও ৩ অক্টোবর হরগঞ্জ বাজারের পুরনো ঠিকানাতেই খুলতে চলেছে ১ টাকার বাজার। মাস কয়েক আগে পরিত্যক্ত এই দোকানকেই নবরূপ দিয়েছিলেন হাওড়ার তরুণ উদ্যোক্তরা।
আরও পড়ুন
কলকাতার বুকে, মাত্র দশ টাকার কবরেই শুয়ে আওয়াধের এই নবাব
আরও পড়ুন
১০ টাকার পরিবর্তে বলুন নিজের সমস্যার কথা, অবসাদের বিরুদ্ধে লড়াই পুনের ছাত্রের
নিজেদের ব্যক্তিগত সঞ্চয় থেকে একটা বড়ো অংশ এই অভিনব উদ্যোগে তুলে দিচ্ছেন মনস্বিতা, তথাগত, মধুশ্রী। তবে তার পরেও ২০০ জন মানুষের হাতে নতুন পোশাক তুলে দেওয়ার কর্মসূচি আর্থিকভাবে বেশ চ্যালেঞ্জিং। ফলত, এবার ক্রাউড ফান্ডিং-এর পথকেও খোলা রেখেছেন তাঁরা। মধুশ্রী জানালেন, “গত পরশুই আমাদের পেজ থেকে সাহায্য চেয়ে পোস্ট করেছি আমরা। তবে অনুদানের কোনো নিম্নসীমা রাখিনি। কেউ ১ টাকা দিতে চাইলেও তাঁকে স্বাগত। আবার কেউ চাইলে নতুন পাঞ্জাবি বা শাড়ি কিনেও আমাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন।”
তবে এই উদ্যোগ একদিনের নয়। এর পিছনে রয়েছে বিস্তারিত পরিশ্রম এবং পরিকল্পনা। বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই সালকিয়ার গলিঘুঁজি পায়ে হেঁটেই সমীক্ষা চালিয়েছেন তিন তরুণ-তরুণী। নিয়েছেন সাধারণের আর্থিক স্বচ্ছলতার জরিপ। সেই সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করেই ২০০ জনের হাতে তুলে দেওয়া হবে বিশেষ কুপন। একমাত্র সেই কুপনের মাধ্যমেই ১ টাকার বাজারে জামাকাপড় কিনতে পারবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
শালকিয়ার তিন তরুণ উদ্যোক্তা নিজেরা স্বনির্ভর হলেও, লকডাউন আর্থিকভাবে নাড়া দিয়ে গেছে তাঁদেরও। কিন্তু তারপরেও নিজেদের সামান্য ক্ষমতা নিয়েই শ্রমজীবী মানুষদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন নতুন দিনের। এমন উদ্যোগের জন্য কোনো প্রশংসাই হয়তো যথাযথ নয়…
Powered by Froala Editor