বয়সে তরুণ তিনি। কলকাতায় পড়াশুনা করতে আসা। মেসবাড়ির ঠিকানা থেকেই একদিন শুরু হয়ে গেল পত্রিকা। তারপর পেরিয়ে গেছে অনেকটা পথ। তবুও প্রয়াস সুনাম কুড়িয়েছে তার কাজে। নতুন নতুন কিছু না কিছু ভেবেছে রোজ। আর এই ভাবনার পিছনে যে মূল মুখটি লুকিয়ে আছে, তিনি সেলিম মণ্ডল। বাংলা কবিতায় প্রথম দশকের অন্যতম প্রতিশ্রুতিমান কবি। সেলিম এক অদ্ভুত মানুষ। কেবল সম্পাদনা নয়, আরও অনেক কিছু নিয়েই ভেবেছেন তিনি। পত্রিকার যে-কোনো সংখ্যায় লিখলেই লেখককে সাম্মানিক দেন সেলিম। এই বিরল উদ্যোগে হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র পত্রিকা এগিয়ে এসেছে।
২০১৫-পরবর্তীতে তবুও প্রয়াস শুরু করল বিশেষ সংখ্যার চিন্তাভাবনা। তারপর ‘নৌকা’, ‘কুটির শিল্প’, ‘গোপাল ভাঁড়’ - একের পর এক দুরন্ত সংখ্যায় পাঠককে মুগ্ধ করল তারা। সেলিম টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বাসী, কোনো কিছুতেই তাড়াহুড়ো না করে, ধীরেসুস্থে ঠিকমতো মেটানোয় বিশ্বাসী তিনি। তাই বেশ সময় নিয়েই, ভরপুর একটি প্রকাশনা সংস্থা খুলে বসেছেন সম্প্রতি। কলেজ স্ট্রিটে একটি আশ্রয়ও হয়েছে ইতিমধ্যেই। সেলিমের কাছে প্রহর জানতে চায়, এইসব কাজের মধ্যে থাকতে থাকতে ব্যক্তি সেলিমের কবিসত্তা কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে কি?
২০১০-পরবর্তী লিটল ম্যাগাজিনগুলোর মধ্যে, একমাত্র 'তবুও প্রয়াস'ই ফুলটাইম প্রকাশনার কাজে যুক্ত। নিজের লেখালিখির পাশাপাশি, সেলিম প্রকাশনার বাণিজ্যিক দিকেও নজর রেখে চলেছেন। সাহিত্যচর্চার সঙ্গে বইয়ের বিপণনের কোনো সংঘাত আছে বলে মনে করেন না সেলিম। কবিতার বইয়ের পাশাপাশি গদ্য এবং প্রবন্ধের বইয়ের দিকেও জোর দিচ্ছেন তাঁরা। কেবলই ব্যবসায়িক কারণে? না। সেলিম জানান তাঁরা ভালো বই করে আনন্দ পান, নিজেদের মধ্যে তৃপ্তি আসে। অনেক নতুন লেখক, যাদের বইয়ের বিপণনের ক্ষেত্রটা এখনও তেমন প্রসারিত নয়, তাদের লেখায় উৎসাহ দিতেও বই করা জরুরি বলে মনে করে তবুও প্রয়াস।
প্রকাশনীর টাইটেল বেড়েছে ভালোই। বইমেলায় লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নের একটা টেবিলে আর হচ্ছে না। খুব তাড়াতাড়ি হয়তো পূর্ণাঙ্গ স্টলের প্রয়োজন পড়বে। 'বইয়ের বাজার নেই' এরকম মন খারাপ করা অনুভূতি তাঁর গলায় নেই। "ভালো বইয়ের বাজার এখনও আছে" বলেই মনে করছেন সেলিম। তবে পাঠকের রুচি বদলাচ্ছে। সেইসঙ্গে তাল মিলিয়ে লেখক বা প্রকাশকরা সবসময় বদলাতে পারছেন এমন নয়। পরিবর্তিত পাঠকের পছন্দকে বুঝতে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছে 'তবুও প্রয়াস'। কবিতার বইয়ের চাহিদা সারা বছর থাকে না, কিন্তু প্রবন্ধের বইয়ের চাহিদা সারা বছরের।
বই বিপণনের এইসব টুকিটাকি হয়তো তাঁর নিজের লেখাকেও প্রভাবিত করবে। যদিও একথা মানতে চাননি সেলিম। মুচকি হেসে বলেন, ‘সবই তো চলছে ঠিকঠাক!’ ফুলটাইম প্রকাশনার সঙ্গে হয়তো তিনি আর বেশিদিন থাকবেন না। এমনই কথা শোনা গেল তাঁর মুখে। তবে নিজের প্রকাশনা সংস্থাকে স্বাবলম্বী করেই কাজ থেকে অব্যাহতি নেবেন সেলিম।