প্রথম ভারতীয় সাঁতারু হিসাবে সরাসরি অলিম্পিকে সজন প্রকাশ

গত সপ্তাহের কথা। বেলগ্রেডে আয়োজিত হয়েছিল অলিম্পিকের কোয়ালিফিকেশন ইভেন্টের আসর। সেই প্রতিযোগিতায় ২০০ মিটার বাটারফ্লাইতে সোনা জিতেও নিরাশ হতে হয়েছিল তাঁকে। কেননা, যোগ্যতা অর্জনের জন্য পাশ করতে হত ‘এ’ মার্কের সময়সীমা। হাতের মুঠো থেকে যেন বেরিয়ে গিয়েছিল অলিম্পিকের সুযোগটা। তবে হতোদ্যম হননি তিনি। বরং হাতিয়ার করে নিয়েছিলেন অধ্যাবসায় আর অনুশীলনকে। এবার সুফল মিলল তারই। প্রথম ভারতীয় সাঁতারু হিসাবে অলিম্পিকে সরাসরি অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করলেন কেরলের সাঁতারু সজন প্রকাশ।

গত শনিবার রোমে আয়োজিত সেটেকেল্লি ট্রফিতে ২০০ মিটার বাটারফ্লাই রাউন্ডে অংশ নিয়েছিলেন সজন। মাত্র ১ মিনিট ৫৬.৩৮ সেকেন্ডের মধ্যেই তিনি সম্পূর্ণ করেন প্রতিযোগিতা। আর অলিম্পিকের এ-মার্কের সময়সীমা ছিল ১ মিনিট ৫৬.৪৮ সেকেন্ড। স্বর্ণপদক ও অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জনের পাশাপাশি এদিন নতুন জাতীয় রেকর্ডও তৈরি করেন সজন। 

২৭ বছর বয়সী সজনের জন্ম কেরালার ইদুক্কি জেলায়। তবে বাবা-মায়ের কর্মসূত্রে তাঁর বেড়ে ওঠা তামিলনাড়ুতে। মা ভি.জে. শান্তিমল দক্ষিণের খ্যাতনামা অ্যাথলিট। জাতীয়স্তরে তো বটেই, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। ফলত, বাড়িতে খেলাধুলা-চর্চার পরিবেশ ছিলই। তবে দৌড় এবং হেপ্টাথলন ছেড়ে তিনি বেছে নিয়েছিলেন সাঁতারকেই। 

কম্পিউটার প্রযুক্তিবিদ্যা নিয়ে পাশ করার পর বর্তমানে সজন কর্মরত তামিলনাড়ুর পুলিশ বিভাগে। তবে কর্মজীবনের কারণে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি খেলাধুলোয়। বরং, নিয়মিতই ভেঙে চলেছেন একের পর এক রেকর্ড। এই মুহূর্তে সাঁতারে ১০টি বিভাগে জাতীয় রেকর্ডের অধিকারী তিনি। রয়েছে ৩টি দক্ষিণ এশীয় এবং ১টি এশীয় রেকর্ডও। ঝুলিতে রয়েছে ৬টি স্বর্ণ ৩টি রৌপ্যপদক। মকুটে জুড়েছে ২০১৭-র এশিয়ান ইন্ডোর গেমসের দ্বিতীয় স্থানাধিকারীর পালকও।

আরও পড়ুন
অলিম্পিকের প্রথম রূপান্তরকামী অ্যাথলিট, ইতিহাস গড়ার পথে লরেল হুবার্ড

এর আগে ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকেও একমাত্র ভারতীয় সাঁতারু হিসাবে পুরুষ বিভাগে অংশ নিয়েছিলেন সজন। তবে সেবারে সরাসরি যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি তিনি। আর মূলপর্বেও অধরা থেকে গিয়েছিল সাফল্য। তবে গত বছরের তুলনায় এবার তাঁর পারফর্মেন্স আরও ক্ষুরধার। আরও শাণিত। তাঁর ওপরেই ভরসা করেই এখন আশার আলো দেখছে গোটা দেশ। শনিবার চোখ ধাঁধানো ফর্ম অলিম্পিকের মঞ্চে বজায় থাকলে সেখানেও আসতে পারে সাফল্য।

আরও পড়ুন
উইম্বলডন, অলিম্পিকের মঞ্চ থেকে সরে দাঁড়ালেন নাদাল; হতবাক বিশ্ব

তবে অলিম্পিকের মূল পর্বে পদক আসুক কিংবা না আসুক, সময়টা যে ভারতীয় সাঁতারের স্বর্ণযুগ, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই কোনো। অন্যদিকে, গত মঙ্গলবার ইউনিভার্সালিটি অলিম্পিক প্রতিযোগী হিসাবে ভারতের জন্য ছাড়পত্র পেয়েছিলেন সাঁতারু শ্রীহরি নটরাজ এবং মান্নান প্যাটেল। সজনের সরাসরি যোগ্যতা অর্জনে অলিম্পিকের মঞ্চে ব্রাত্য থেকে যাচ্ছেন তাঁরা। তবে এখনও সুযোগ পাওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে শ্রীহরি নটরাজের। গত শুক্রবার ভারতীয় সুইমিং ফেডারেশনের টুর্নামেন্টে অল্পের জন্যই যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ হাতছাড়া হয় তাঁর। অলিম্পিকের ‘ওএসটি’ বিভাগে রঙিন ফর্ম মেলে ধরতে পারলে তিনিও অর্জন করতে পারেন টোকিও অলিম্পিকের টিকিট। আর তা যদি সত্যি হয়, তবে তৈরি হবে আরও এক নজির। প্রথমবারের জন্য ভারতের দুই প্রতিনিধি অংশ নেবে অলিম্পিকে। এখন সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তেরই অপেক্ষা করছেন ভারতের ক্রীড়াপ্রেমীরা। তবে সাফল্য আসুক আর না আসুক, সাঁতারে তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন সজন কিংবা নটরাজরা…

আরও পড়ুন
অলিম্পিকের স্বাস্থ্যবিধি অবৈজ্ঞানিক, দাবি স্বাস্থ্যবিদদের

Powered by Froala Editor

Latest News See More