লকডাউনে বন্ধ শিক্ষকতা, উপার্জনের দায়ে ক্ষেতমজুরি সাহিত্য অ্যাকাডেমি জয়ী লেখকের

সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতি সারা দেশকে এক অনিশ্চিত সময়ের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে। আর্থিক দুরাবস্থার মধ্যে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সকলেই। আর এর মধ্যেই মহারাষ্ট্রের সাহিত্য অ্যাকাডেমি যুব পুরস্কারের প্রাপক নবনাথ গোরেকে তাঁর সাহিত্যের জগত থেকে সরে এসে কাজ করতে হচ্ছে চাষের ক্ষেতে। সম্প্রতি এমনই দৃশ্য সামনে এসেছে।

মহারাষ্ট্রের নিগদি গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নবনাথ গোরের। জন্মেছেন ধাঙড় উপজাতির একটি পরিবারে। তাই ছোট থেকেই জীবনের নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী থেকেছে গোরে। দেখেছেন কীভাবে জাতিগত কারণে বৈষম্যের মুখে পড়তে হয় দলিত ও আদিবাসীদের। আর এই সমস্ত লড়াই সহজেই জয় করে নিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন শিক্ষিত সমাজে। লকডাউনের আগে পর্যন্ত তিনি আহমদনগর জেলার একটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। কিন্তু এখন কলেজের পঠনপাঠন বন্ধ। বন্ধ গোরের রোজগারও। তিনি কলেজে চুক্তি ভিত্তিতে শিক্ষকতা করতেন, তাই পঠনপাঠন বন্ধ থাকায় আর মাইনে পাননি, এমনটাই জানিয়েছেন গোরে।

রোজগার নেই, অথচ অসুস্থ মা সহ সংসারের সমস্ত দায়িত্ব ৩২ বছরের এই যুবকের কাঁধের উপর। তাই শেষ পর্যন্ত ঘরে বসে থাকা আর সম্ভব নয়। এর মধ্যে তাঁর বাড়ি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে একটি চাষের ক্ষেতে ক্ষেতমজুরের কাজ পেয়ে সাগ্রহে সেটাই বেছে নিলেন তিনি। রোজগার নামমাত্র। কিন্তু এই অসহায় পরিস্থিতিতে তাই যে অনেক। তাই বিগত ৪ মাস ধরে সেখানেই দেখা যাচ্ছে তাঁকে। কিছুটা বাড়তি রোজগারের আশায় কাজ করছেন সূর্য ডুবে যাওয়ার পরেও।

অথচ এই মানুষটাই সাহিত্যিক হিসাবে সম্মান পেয়েছেন কিছুদিন আগে পর্যন্ত। ২০১৮ সালে তাঁর উপন্যাস ‘ফেসাতি’ সাহিত্য অ্যাকাডেমি যুব পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছে। সেই উপন্যাসে তিনি তুলে ধরেছিলেন গ্রামাঞ্চলের যুবকদের কঠিন জীবনের ছবি। যে ছবি তিনি জন্ম থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। এবার আবারও ফিরে আসতে হল সেই জীবনেই। যেন উপন্যাসের চরিত্র নাথা গোরের সঙ্গে একাকার হয়ে গেলেন লেখকও। কিন্তু এই দুঃসময় পেরিয়ে যেতে কি পারবেন তাঁরা?

আরও পড়ুন
চাকরি নেই, ভরসা সবজি বিক্রি; দিল্লির শিক্ষকদের অবস্থা এখন এমনই

Powered by Froala Editor