বাঙালি তো বটেই, বোধহয় দেশের সর্বত্র মধ্যবিত্ত জীবনের সবচেয়ে জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম রেলগাড়ি। বিশেষত লোকাল ট্রেন। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের ভিড়ে কামরা গমগম করে। কিন্তু সেই কামরাগুলিকে আদৌ নিজেদের বলে মনে করি কি আমরা? লোকাল ট্রেনে উঠলেই তো দেখা যায়, কোথাও ফলের খোসা, কোথাও খাবারের ঠোঙা পড়ে আছে। এছাড়াও আছে পানের পিক। অথচ প্রতিদিনের যাতায়াতের এই ঘরটুকু একটু পরিচ্ছন্ন দেখতেও কি ভালো লাগে না?
‘এমনই একটা ভাবনা থেকেই রেলের কামরা সাজিয়ে তোলার কথা ভেবেছিল শিয়ালদা রেল কর্তৃপক্ষ। আর সেই কাজে শামিল হতে পেরে ভালোই লাগছে।’ – প্রহরকে এমনটাই বলছিলেন শিল্পী প্রহ্লাদ ভাণ্ডারী। হঠাৎ যদি একদিন ট্রেনে চড়ে দেখেন, কামরার দেওয়ালে আঁকা অসংখ্য ছবি, সঙ্গে কবিতার দু-একটি লাইন। এমন একটা কামরা নোংরা করতে মন চাইবে না কারোরই। আর এই ছবিটাই এখন দেখতে পাবেন শিয়ালদা লাইনের পাঁচটি ট্রেনে।
আপাতত মহিলা কামরাতেই কাজ করেছেন শিল্পীরা। সেখানে আছে নারীশক্তি, দেশাত্মবোধ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি বিষয়ের উপর সচেতনতামূলক ছবি। এছাড়াও সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সহজ পাঠের ছবি জুড়ে জুড়ে তৈরি একটি কোলাজ। ‘যে সহজপাঠ আজ থেকে বছর পনেরো আগেও বাংলার শিশুদের অবশ্যপাঠ্য ছিল, আজ তো সেটা হারিয়েই গিয়েছে। তার সামান্য কিছু ঝলক যদি বাঁচিয়ে রাখা যায়, তাহলে মন্দ কী?’ প্রহ্লাদ ভান্ডারী এবং তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মী দেবাশিষ কর্মকার একসঙ্গে এই কাজে হাত দিয়েছেন ডিসেম্বর মাসে। ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পাঁচটি কামরার কাজ সম্পূর্ণ করলেও, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে কাজ আর এগোয়নি। তবে আগামী মাস থেকেই আবার কাজ শুরু করতে পারবেন বলে আশ্বাস পেয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে।
আরও পড়ুন
গত তিনদিনে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে মৃত ৯, অস্বীকার রেল কর্তৃপক্ষের
আরও পড়ুন
খেলা দেখাতে দেখাতেই ‘বন্ধু’কে হত্যা, ডলফিন ও তার ট্রেনারের করুণ গল্প
বছর দশেক আগেও দুর্গাপুর স্টিল ফ্যাক্টরিতে টেকনিশিয়ানের কাজ করতেন বোলপুর নিবাসী প্রহ্লাদবাবু। সেখানে একটি বিজ্ঞান মডেলের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন ২০১১ সালে। কিন্তু পরিবারের সূত্রেই শিল্প জগতের সঙ্গে তাঁর যে আবাল্য বন্ধুত্ব। তাই শেষ পর্যন্ত সেখানেই ফিরতে হয়েছে তাঁকে। প্রহরের সঙ্গে কথায় কথায় সেই টানাপোড়েনের মুহূর্তগুলো স্মৃতির গভীর থেকে মন্থন করে আনছিলেন শিল্পী। বলছিলেন, দুর্গাপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজোর প্যান্ডেলের থিম তৈরির কথাও। আর সেইসব কাজে বেশিরভাগ সময়েই সঙ্গ দিয়েছেন বাঁকুড়ার শিল্পী দেবাশিস কর্মকার। তাই শিয়ালদা রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যখন এই কাজের বরাত পেলেন, তখন আবার গাঁটছড়া বাঁধলেন তাঁরা। এমনকি লকডাউনের সময়েও দুই শিল্পী তাঁদের পরবর্তী কাজগুলির পরিকল্পনা করে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন
১২ই মে থেকে সাধারণের জন্য চালু হচ্ছে দূরপাল্লার ট্রেন, ঘোষণা রেলমন্ত্রকের
আরও পড়ুন
ঘুমন্ত শরীরের ওপর দিয়েই চলে গেল ট্রেন, মৃত ১৫ পরিযায়ী শ্রমিক
রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শিয়ালদা জংশনের প্রতিটি রুটের রেলগাড়ির কামরা সাজিয়ে তোলা হবে এভাবেই। অবশ্য এই কাজে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। তবে একদিন নিশ্চই লোকাল ট্রেন বলতে পরিচিত নোংরা এবং অস্বাস্থ্যকর কামরাগুলির চেহারা বদলাবে। প্রতিটি যাত্রা শুধু শান্তিপূর্ণ নয়, হয়ে উঠবে শিল্পপূর্ণও।
আরও পড়ুন
লকডাউনে ট্রেন্ডিং 'ডালগোনা কফি', গোটা এশিয়া ঘুরে ফিরল ভারতেই
ছবি ঋণ - অভীক
Powered by Froala Editor