ভারতীয় দর্শকদের একটা বড়ো অংশের কাছে খেলা বলতে মূলত ক্রিকেট, ফুটবল এবং হকি। এর বাইরেও যে একটা বড়ো জগত রয়েছে ক্রীড়াক্ষেত্রের, ক’জনই বা খোঁজ রাখেন তার? সদ্য-সমাপ্ত অলিম্পিকেই ভেঙেছিল সেই প্রথাগত চিন্তাধারা। গোটা দেশ উচ্ছ্বাসে ভেসেছিল নীরজ চোপড়ার স্বর্ণজয়ে। এবার সেই ঐতিহাসিক জয়েরই যেন পুনরাবৃত্তি হল প্যারালিম্পিকে। পুরুষদের এফ-৬৪ বিভাগে এবার সোনা জিতে গোটা বিশ্বকে বাকরুদ্ধ করে দিলেন এস সুমিত অ্যান্টিল।
সোমবার টোকিও-র মঞ্চে এক রূপকথার জন্ম দিলেন সুমিত। প্রথম থ্রো-তে ৬৬.৯৫ মিটার দূরত্বে জ্যাভলিন পাঠিয়েই বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় চেষ্টায় তিনি জ্যাভলিন অতিক্রম করান ৬৮.০৫ মিটার। তৃতীয় ও চতুর্থ থ্রো-তে তাঁর বর্শা খানিকটা কম দূরত্বে পৌঁছালেও, শেষ সুযোগে আরও একবার নিজের রেকর্ড ভাঙেন সুমিত। ৬৮.৫৫ মিটার দূরত্বে বর্শা পাঠিয়ে এই মুহূর্তে জ্যাভলিনে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ প্যারা-অ্যাথলিট তিনিই। একই প্যারালিম্পিকে তিন-তিনবার বিশ্বরেকর্ড ভাঙার এই কৃতিত্ব কথায় বিরলই। অলিম্পিকও এমন রূপকথার গল্প কখনও জন্ম দিয়েছে কিনা, সন্দেহ আছে তা নিয়ে।
অবশ্য শুধু সুমিতই নন। সোমবার সকালেই জ্যাভেলিনে রুপোর পদক এনেছিলেন দেবেন্দ্র ঝাঁঝারিয়া। বিগত দু’বারের প্যারালিম্পিক স্বর্ণজয়ীর সামান্যের জন্যই এবার অধরা থেকে যায় স্বর্ণপদক। অন্যদিকে ভারতের আরও এক প্যারা-জ্যাভেলিন থ্রোয়ার রণজিৎ ভাটি ৬টি চেষ্টাতেও বৈধ থ্রো করতে পারেননি। ফলে, ছিটকে যান প্রতিযোগিতা থেকে। এমন হতাশার মুহূর্তে সমস্ত সমীকরণকেই যেন ওলটপালট করে দিলেন সুমিত। জ্যাভলিনে যে ভারত আগামীদিনে রাজত্ব করতে চলেছে বিশ্বদরবারে, সেকথাই বুঝিয়ে দিলেন তিনি।
পারফর্মেন্সের নিরিখে নীরজের থেকে অন্যান্য প্রতিযোগীরা যেমন পিছিয়ে ছিলেন বহুগুণ, এক্ষেত্রেও দেখা গেল সেই একই ঘটনা। এক কথায় টোকিও-র মঞ্চে এদিন সুমিত ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তাঁর প্রথম থ্রোটিই যথেষ্ট ছিল সোনা আনার পক্ষে। কারণ, দ্বিতীয় স্থানাধীকারী রৌপ্যজয়ী মাইকেল বুরিয়ানের অতিক্রান্ত দূরত্ব মাত্র ৬৬.২৯ মিটার। নীরজের পর সুমিতের এই সাফল্যের পর ভারত সরকার জ্যাভলিন প্রশিক্ষণ এবং পরিকাঠামোয় যে আরও বিশেষভাবে নজর দেবে, সে ব্যাপারেই আশাবাদী দেশের ক্রীড়াবিদরা…
আরও পড়ুন
প্যারালিম্পিক শ্যুটিং-এ স্বর্ণপদক, ইতিহাস গড়লেন রাজস্থানের অবনী
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
টোকিও-য় আফগানিস্তানের দুই খেলোয়াড়, প্যারালিম্পিক মঞ্চে রূপকথার জন্ম