২৬ বছর পালিয়ে থাকার পর অবশেষে গ্রেপ্তার রাওয়ান্ডা গণহত্যার চক্রান্তকারী

দীর্ঘদিন ধরেই পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন পুলিশের হাত থেকে। তাঁর নিজের দেশ রাওয়ান্ডাই শুধু নয়, বিশ্বের নানা দেশের পুলিশও খুঁজে বেড়াচ্ছিল তাঁকে। অপরাধ? ১৯৯৪-এর কুখ্যাত রাওয়ান্ডান জেনোসাইডের অন্যতম চক্রান্তকারী ছিলেন তিনি। চার মাসের মধ্যে কয়েক লাখ মানুষকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়। প্রায় আড়াই দশক পর সেই মানুষটি, ফেলিসিয়েন কাবুগাকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

রাওয়ান্ডারই ধনকুবের বলা যেতে পারে কাবুগাকে। বেশ কিছু ব্যবসার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন তিনি। তাঁর মধ্যে প্রধানতম হল চায়ের ব্যবসা। রীতিমতো ফুলে ফেঁপে উঠেছিল তাঁর ঘর। নব্বইয়ের দশকে রাওয়ান্ডার সবথেকে ধনী ব্যক্তি ছিলেন তিনি। সেইসঙ্গে রাজনৈতিক হাতও শক্ত করছিলেন কাবুগা। শাসক দলের সঙ্গে সমঝোতাও বাড়ছিল। এমন সময় ১৯৯৪ সালে একটি প্লেন দুর্ঘটনায় মারা যান রাওয়ান্ডার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুভেনাল হাবিয়ারিমানা। শাসক দলের সবাইকে নাড়িয়ে দেয় এই ঘটনা। তখনই রীতিমতো ছক কষে সমস্ত দোষ দিয়ে দেওয়া হয় সেখানকার সংখ্যালঘু আদিবাসী গোষ্ঠী টুৎসিদের।

অন্যান্য চক্রান্তকারীদের দলে ভিড়লেন ফেলিসিয়েন কাবুগাও। প্ল্যান করা হল জেনোসাইডের। তাতে বিপুল অর্থসাহায্য করলেন কাবুগা। ১৯৯৪ সালের এপ্রিল থেকে জুলাই— চার মাস ধরে চলল হত্যালীলা। আট লাখের থেকেও বেশি সংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়। বেশিরভাগই ছিল টুৎসি; তবে যারাই এই ঘৃণ্য উদ্যোগের প্রতিবাদ করেছিল, তাঁদেরও খুন করা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে যখন এই বিষয়টি ওঠে, তখনই কাবুগাকে গ্রেফতারের কথা বলা হয়। কিন্তু ততদিনে দেশ ছেড়ে পগারপার তিনি। ১৯৯৭ সাল থেকে চোর-পুলিশ খেলা শুরু হল। শুধু পুলিশই নয়; রাষ্ট্রপুঞ্জ, সাংবাদিকরাও তাঁকে খোঁজার জন্য উঠে পড়ে লাগে। কয়েকজন খুনও হন এই সময়। আফ্রিকা থেকে ইউরোপে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন কাবুগা।

এরই মধ্যে একটি উপায় খুঁজে বার করলেন তদন্তকারীরা। কাবুগার পাঁচ সন্তানের ওপর গোপন নজরদারি শুরু করা হল। ইতিমধ্যেই খবর এসে গেছে, সম্ভবত ফ্রান্সে রয়েছেন কাবুগা। সোনালি সুযোগ এনে দিল লকডাউন। সবকিছু বন্ধ; আর এই সুযোগে গোটা পুলিশ বাহিনীর নিশানা হয়ে গেল ওই একটি মানুষ। জানা গেল, প্যারিসের কাছেই কোথাও ভুয়ো নামে ঘাঁটি গেরেছেন ৮৪ বছরের কাবুগা। শেষ পর্যন্ত সেই ঘাঁটিরও সন্ধান পাওয়া গেল। শেষ পর্যন্ত এই মে মাসেই গ্রেফতার হলেন ফেলিসিয়েন কাবুগা। আট লাখ নিরীহ মানুষের মরদেহ কি বিচার পাবে? নজর থাকবে গোটা বিশ্বের। নজর থাকবে রাওয়ান্ডারও…

Powered by Froala Editor