রাশিয়ার দখলে চের্নোবিলের অভিশপ্ত পারমাণবিককেন্দ্র, ইউরোপজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ

বিগত কয়েক মাস ধরেই ক্রমশ চাপানউতোর চলছিল রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে। অবশেষে সেই স্নায়ুযুদ্ধে ইতি পড়েছে গতকাল। ইউক্রেনে সম্পূর্ণভাবে সামরিক আক্রমণ চালিয়ে রাশিয়া। এবার উত্তর ইউক্রেনের অভিশপ্ত চের্নোবিল পাওয়ার প্ল্যান্টের (Chernobyl Power Plant) দখল নিল রুশ বাহিনী (Russia)। ইউক্রেনে (Ukraine) রাশিয়ার বহুমুখী আক্রমণের প্রথম দিনেই এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এক্সক্লুশন জোনের দখলদারি রীতিমতো চিন্তা বাড়াচ্ছে কূটনৈতিক মহলের।

পরিত্যক্ত চের্নোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মূলত পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করে ইউক্রেনের স্টেট এজেন্সি অফ এক্সক্লুশন জোন ম্যানেজমেন্ট। হঠাৎ কোনো বড়ো বিপত্তি ঠেকাতে সর্বদাই মোতায়েন রাখা হয় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রযুক্তবিদদের বাহিনী। পরিত্যক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রের দখল নেওয়ার পাশাপাশি, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হাতে বন্দি তাঁরাও। এমনটাই জানাচ্ছেন ইউক্রেন রাষ্ট্রপতির প্রধান উপদেষ্টা মাইখিলো পোডোলিয়াক এবগ এক্সক্লুশন জোন ম্যানেজমেন্টের মুখপাত্র ইয়েভজেনিয়া কুজনেতসোভা। 

১৯৮৬ সালের ২৪ এপ্রিল ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল চের্নোবিল। তখনও পর্যন্ত অটুট ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। ইউক্রেন ছিল সোভিয়েতের অঙ্গরাজ্য। পরবর্তীতে অন্যান্য কারণের সঙ্গে চের্নোবিল দুর্ঘটনাও অন্যতম কূটনৈতিক কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সোভিয়েত পতনের জন্য। 

দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় চের্নোবিলের সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনাস্থল সিসার আবরণে ঢেকে ফেলা হলেও, সম্পূর্ণভাবে থেমে যায়নি তার রোষ। চের্নোবিলের ভগ্নস্তূপের মধ্যে আজও জেগে রয়েছে তেজস্ক্রিয় পারমাণবিক বর্জ্য। যা সক্রিয় থাকবে আগামী দেড় হাজার বছর। ফলে, চের্নোবিল সামরিক ঘাঁটি বা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে উদ্বেগ। পাশপাশি বেশ কিছুদিন ধরেই চের্নোবিলের অভিশপ্ত রিঅ্যাক্টর-৪-এর সারকোফেগাস বা আবরণ থেকে লিক করে স্বল্পমাত্রায় তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর ঘটনা লক্ষ করেছিলেন গবেষকরা। থেমে রয়েছে সেই মেরামতির কাজও। এমতাবস্থায় রণনীতির সামান্যতম ভুলও পুনরায় উন্মুক্ত করে দিতে পারে চের্নোবিলের অভিশপ্ত অগ্নিকুণ্ড। কাজেই আর নিরাপদে নেই গোটা ইউরোপ। এমনটাই অভিমত কূটনীতিবিদ ও বিজ্ঞানীদের একাংশের।

আরও পড়ুন
পরিত্যক্ত চের্নোবিল ঘিরেও গড়ে উঠছে যুদ্ধ আশঙ্কা

চের্নোবিল দখলের খবর পাওয়ার পর, তৎপরতার সঙ্গেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। সিভিল সার্ভিস প্রকল্পকে ব্যহত করার তীব্র নিন্দা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনের পক্ষ থেকেও ক্রেমলিনে পৌঁছেছে চের্নোবিল-মুক্তির আর্জি। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনোরকম উত্তর মেলেনি রুশ কর্তৃপক্ষর কাছ থেকে। চের্নোবিল ছাড়াও রাজধানী কিয়েভের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে রাশিয়ান সেনা। দূরপাল্লার আর্টিলারিতে বিধ্বস্ত রাশিয়ান সীমান্তবর্তী ইউক্রেনের খারকিভ শহরও। এখন দেখার মার্কিন ও পশ্চিমি জোটের তৎপরতায় রুশ বাহিনীর ত্রিমুখী হামলায় আদৌ ইতি পড়ে কিনা…

আরও পড়ুন
চের্নোবিলকে বিষমুক্ত করবে প্রযুক্তি, পথ দেখালেন সুইস বিজ্ঞানীরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
চের্নোবিলে তৈরি মাদক পানীয়েও বহাল তেজস্ক্রিয়তা!