নয় বছরের ছোট্ট ছেলে পাভেল। না, কোনো উপন্যাসের নয়। রাশিয়ার মাটিতে এক বাস্তব পাভেলের গল্প এটা। বলা ভালো, পাভেলের ভালোবাসার গল্প। আজকাল অনেক বাচ্চারই ছোটবেলার খেলার সঙ্গী থাকে কোনো পোষা কুকুর বা বেড়াল। পাভেলেরও সেরকম একটা কুকুর ছিল। পাভালের সঙ্গে ভারী বন্ধুত্ব ছিল তার। কিন্তু হঠাৎই বিচ্ছেদ ঘটল তাদের। মারা গেল সেই কুকুর। না, কোনো দুর্ঘটনা নয়। বয়সের কারণেই মারা গেল সে।
আরও পড়ুন
নিজে সতর্ক হয়ে, শিশুদের ব্যস্ত রাস্তা পার করে দিল কুকুর
পাভেল ভুলতে পারেনি সেই বিচ্ছেদ। রাস্তার কুকুরদের যখনই দেখত, মনে পড়ত তার বন্ধুর কথা। এমন সময় পাভেলের সঙ্গে পরিচয় কিছু মানুষের। তাঁরা ‘সোল অ্যানিমেল সেন্টার’ নামে একটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। আর্জামাস শহরের অন্তত ১০০টি পথের কুকুরকে দেখভাল করেন তাঁরা। তবে অর্থের অভাবে অনেককিছুই করে উঠতে পারেন না।
আরও পড়ুন
শীতের সকালে পথে রিক্সা, লেপ মুড়ি দিয়ে সওয়ারি কুকুর— ভাইরাল হল ছবি
এখান থেকেই গল্পের কাহিনিপ্রবেশ। অর্থের অভাবে কাজ করতে না পারা সংস্থাটির জন্য কিছু করার কথা ভাবতে থাকে পাভেল। ক্রমশ জড়িয়েও পড়ে তাদের কাজকর্মে। বয়সে যদিও সে সবার থেকে অনেক ছোটো। কিন্তু পাভেলকে যে সেখানে টেনে নিয়ে যায় তার পুরনো বন্ধুর স্মৃতি। আর অর্থসংগ্রহের জন্য একটা দারুণ পথ খুঁজে পায় সে। ছোটো থেকেই ছবি আঁকার হাত বেশ পাকা পাভেলের। আর পশুপাখির ছবি আঁকতে তো তার আলাদাই আগ্রহ। অর্থের জন্য ছবিকেই বেছে নিল পাভেল। নানা মানুষের বায়না মতো তাদের পোষ্যদের ছবি এঁকে দিতে থাকে পাভেল। বদলে রাস্তার কুকুরদের জন্য কিছু খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী পেলেই সে খুশি। আর সংস্থার এই খুদে সদস্যের কাজে খুশি ‘সোল অ্যানিমেল সেন্টার’এর বাকিরাও।
আরও পড়ুন
ঠেলাগাড়িই ‘অ্যাম্বুলেন্স’, অসুস্থ কুকুরদের নিয়ে শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছোটেন পেরেস
পাভেলকে উৎসাহ দিতে এগিয়ে এসেছেন তার মা একাটেরিনা বলশাকোভা। ছেলের এই প্রোজেক্টের নাম তিনি রেখেছেন ‘গুড পেইন্টব্রাশ’। কখনও ছেলের সঙ্গে তুলি ধরেন নিজেও। আর এভাবেই একটু একটু করে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তাঁদের কাজ। গত দুবছরে কয়েক শত পোষ্যের ছবি এঁকেছে পাভেল। আর তার এই কাজ যে রাস্তার কুকুরদের সাহায্য করতে পারছে, এতেই খুশি সে। এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে যখন একজন মানুষ আরেকজন মানুষের দিকেই ফিরে তাকানোর অবকাশ পায় না, তখন পাভেলের কাজ ব্যতিক্রমী তো বটেই। নয় বছরের সামান্য কিশোরের মধ্যে মানবতার যে বিকাশ ঘটেছে, তা যদি প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ঘটত, পৃথিবীটা তাহলে হয়তো অন্যরকম হত অনেকটাই।