বয়সের ভারে খানিকটা ঝুঁকে পড়েছেন সামনের দিকে। মুখের ঈষৎ কুঞ্চিত চামড়াতেও স্পষ্ট ফুটে উঠছে বয়সের ছাপ। তবে তাঁর সাহসিকতা কিংবা মনের জোরের কাছে হার মানবে তরুণ-তরুণীরাও। তাঁর হাতে ধরে থাকা প্ল্যাকার্ডই তার অকাট্য প্রমাণ। তাতে লেখা, ‘পুতিন মানেই যুদ্ধ! পুতিনের জন্য আমরা দেশের তরুণদের হারাতে চাই না।’ সম্প্রতি, রাশিয়ার বুকে সেন্ট পিটার্সবার্গ (St. Petersburg) শহরের কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে খোদ পুতিনের বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছিল ৭৬ বছর বয়সি মহিলা শিল্পী এলেনা ওসিপোভাকে (Elena Osapova)। এবার দেশদ্রোহিতার কারণে গ্রেপ্তার হলেন অশীতিপর শিল্পী।
না, এলেনা কোনো জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক শিল্পী নয়। সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাঁর কর্মকাণ্ড। এমনকি শিল্পজগৎ থেকেও তিনি অবসর নিয়েছেন বছর দশেক আগে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতিতে আবার রং-তুলিকে অস্ত্র করে নিয়েছিলেন এলেনা। কখনও তাঁর তুলির টানে পুতিন হয়ে উঠেছে বাইবেলের সেটান বা শয়তান, তরুণ সৈনিকদের ভয়াবহ মৃত্যুর ছবি, কখনও আবার শুকিয়ে ঝরে পড়া টিউলিপ ফুলের ছবি— ‘হোয়্যার হ্যাভ অল দ্য ফ্লাওয়ার্স গন’।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকেই বহু রুশ নাগরিকের মতো যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছিলেন এলেনা। রুশ সৈনিকদের মায়েদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘সোলজারস মাদারস’ নামে একটি সংগঠনও। রুশ সৈনিকদের ঘরে ফিরিয়ে আনা এবং তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। আর এই আবেদন সরকারের কাছে পৌঁছে দিতেই তিনি হাতিয়ার করে নেন শিল্পকে। সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের বিখ্যাত জাদুঘরের সামনেই তিনি হাজির হন হাতে আঁকা প্ল্যাকার্ড আর ছবি নিয়ে। আর এই উদ্যোগে এগিয়ে এসেছিলেন বহু সাধারণ নাগরিকও। তবে বাধ সাধল প্রশাসন।
সম্প্রতি, দেশদ্রোহিতার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হল ৭৬ বছর বয়সি বৃদ্ধা রুশ শিল্পীকে। একই সঙ্গে তাঁর সমস্ত শিল্পকর্ম ও প্ল্যাকার্ড বাজেয়াপ্ত করেছে রুশ পুলিশ। তবে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখনও নিজের সিদ্ধান্তেই অবিচল এলেনা। তাঁর অভিমত, ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কিত একটি অধ্যায়। প্রশাসন দেশবাসীর মনে মিথ্যে দেশপ্রেম জাগানোর প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য রুশ সৈনিকদের ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর মুখে…
Powered by Froala Editor